সহপাঠীদের সামনে শ্লীলতাহানির অপমান সইতে না পেরে কিশোরীর আত্মহত্যা

শ্লীলতাহানি
প্রতীকী ছবি

প্রকাশ্যে সহপাঠীদের সামনে কিশোরীকে (১৪) শ্লীলতাহানি করেন গ্রামের তরুণ নয়ন পাঠান (২০)। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে সে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। আজ রোববার দুপুরে ওই কিশোরীর বাড়িতে গেলে তার সহপাঠী, প্রতিবেশী ও এলাকাবাসী এ তথ্য জানান।

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার একটি গ্রামে গত শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে নয়ন পলাতক। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মৃত কিশোরী অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পাশাপাশি মাধবপুর কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য ছিল সে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাধবপুর কিশোর-কিশোরী ক্লাবের অধীনে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সপ্তাহে দুদিন (শুক্র-শনিবার) বিকেলে গান শেখানো হয়। গত শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটায় তিন-চারজন সহপাঠীর সঙ্গে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল মেয়েটি। নয়ন ও তাঁর তিন বন্ধু বিজয় (২০), আরমান (২০) ও ইমন (২০) তাকে পথে পেয়ে উত্ত্যক্ত করেন। তখন সহপাঠীদের নিয়ে মেয়েটি দৌড়ে বিদ্যালয়ে চলে যায়। কিন্তু তখনো গানের ক্লাস শুরু না হওয়ায় ১০-১২ জন সহপাঠীর সঙ্গে বসে ছিল সে। এ সময় নয়নের নেতৃত্বে ৪-৫ জন ওই কক্ষে ঢুকে সবার সামনে তার শ্লীলতাহানি করেন। এরপর সে কান্না করতে করতে বাড়িতে চলে যায়।

এলাকাবাসী জানান, মেয়েটি বাড়িতে ফিরে কীটনাশক পান করে। ছটফট করতে শুরু করলে তাঁর বড় বোন অন্য ঘর থেকে বেরিয়ে অন্যদের সহায়তায় তাকে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে মাসুমার লাশ গ্রামে ফেরে।

দুপুরে কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার মা কাঁদছেন। তাঁকে ঘিরে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। তার মা বলেন, এক বছর ধরে ওই বখাটে (নয়ন) তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছিল। তার জন্য মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারত না। নয়নের পরিবারের কাছে অসংখ্যবার বিচার দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

বোন রুমা বেগম বলেন, ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন। হঠাৎ বোনের কান্না শুনে ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন, সে উঠানে পড়ে কাতরাচ্ছে। পরে বুঝতে পারেন বিষ পান করেছে। তখন বারবার সে নয়নের কথা বলছিল।

আরও পড়ুন

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মাসুমার এক সহপাঠী বলে, ঘটনার দিন তারা চারজন গানের বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। পথে নয়নসহ ৪-৫ জন তরুণ উত্ত্যক্ত করেন। তাঁর কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে তারা দৌড়ে স্কুলে যায়। নয়ন সঙ্গীদের নিয়ে সেখানে গিয়ে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ১০ থেকে ১২ জনের সবাই কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য। ঘটনার সময় গানের প্রশিক্ষক ছিলেন না।

গ্রামের অধিকাংশ মানুষের দাবি, নয়ন কিছুদিন ঢাকায় ছিলেন। কয়েক দিন আগে বাড়িতে ফেরেন। তাঁর ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল আছে। তাঁদের উচ্ছৃঙ্খলার কারণে গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ বলে জানান ওই গ্রামের বাসিন্দা হারুন মিয়া।

বিকেলে নয়নের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে নয়নের নিকটাত্মীয় রেহেনা বেগম বলেন, মাসুমা মারা যাওয়ার পর থেকে নয়নের পরিবার গ্রামছাড়া।

মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। নিহত কিশোরীর পরিবারের দাবি, মেয়েকে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি করায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।