‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’, ‘আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘স্বাধীনতার এ কী হাল, নিয়ে গেল ঘরের চাল’ ইত্যাদি স্লোগানে দেশব্যাপী সংঘটিত মন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা এবং লুটপাটের প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামে বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে গতকাল শনিবার বিকেলে চেরাগী পাহাড় ও জামালখান এলাকায় আয়োজিত এই সমাবেশ সন্ধ্যার আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
চেরাগী চত্বরকে কেন্দ্র করে পশ্চিমে বৌদ্ধমন্দির মোড়, উত্তরে জামালখান মোড় ও দক্ষিণে আন্দরকিল্লা হয়ে লালদীঘি সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল সমাগমটি। এতে বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হন। এ ছাড়া বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের নেতা ও মঠমন্দিরের পুরোহিতরা তাঁদের ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হন। সমাবেশটিতে কোনো বক্তব্য ছিল না। সারাক্ষণ স্লোগান স্লোগানে মুখর ছিল সমাবেশটি।
‘হর হর মহাদেব’, ‘জয় শ্রী রাম’স্লোগান ছিল নারী-পুরুষের মুখে মুখে। চেরাগী চত্বর, আন্দরকিল্লা চত্বর, জামালখান মোড়—সবখানে দাঁড়িয়ে লোকজন স্লোগান দিয়েছেন। ইংরেজি ও বাংলায় নানা স্লোগান দেওয়া হয়। একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘এই বাংলাদেশ আমার পূর্ব পুরুষের রক্তে গড়া, এই দেশ ছেড়ে যাব না’। আরেকটিতে লেখা ছিল ‘সেভ বাংলাদেশি হিন্দু’। এ ছাড়া ‘আমার মন্দিরে হামলা কেন প্রশাসন জবাব চাই’, ‘রক্তে আগুন লেগেছে সনাতনীরা জেগেছে’, ‘মুগ্ধ ভাই পানি লাগবে সনাতনীদের ঘরবাড়ি জ্বলছে’ ইত্যাদি ব্যানার ফেস্টুনে লেখা ছিল।
মা–বাবার হাত ধরে ছেলেমেয়ে, মায়ের কোলে শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এতে উপস্থিত হন। আন্দরকিল্লা মোড়ে দাবিসংবলিত একটি ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন দেওয়ানবাজার থেকে আসা স্নাতকের শিক্ষার্থী দিব্য চক্রবর্তী। তাঁর দাবিগুলোর মধ্যে ছিল সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, সুরক্ষা কমিশন গঠন, সংখ্যালঘুদের ১০ শতাংশ সংসদীয় আসন বরাদ্দ করতে হবে। দিব্য চক্রবর্তী বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু দেশে তো হিন্দুরা এখনো দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। এই বৈষম্য কে দূর করবে?
গোল পাহাড় মহাশ্মশান পরিচালনা পরিষদের নির্বাহী সদস্য উত্তম বিশ্বাসও কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক রুবেল দে সমাবেশে যোগ দেন। জামালখান এলাকায় উত্তম বিশ্বাস বলেন, সরকার পরিবর্তন হলে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়। ২০০১ সালের পর এবার সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘুরা। হিন্দু বাড়িঘর ও মঠমন্দিরে হামলা হচ্ছে। তাই আজ সবাই রাস্তায় নেমে এসেছেন।
কোনো কোনো নারী এসেছিলেন পুজোর শাঁখ নিয়ে। একপর্যায়ে চেরাগী পাহাড় মোড়ে শাঁখ বাজান তাঁরা। বাংলাদেশ গীতা শিক্ষা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা তপন কান্তি দাশ ছিলেন চেরাগী চত্বরে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। মার খেতে খেতে আর কত মার খাবে। স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না। এত হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
এই জনসমাগমের কারণে বিকেল চারটা থেকে আন্দরকিল্লা, জামালখান মোমিন রোডসহ বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।