‘বিএনপি নেতার নির্দেশে’ দোকানে তালা, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছুটছেন ব্যবসায়ী
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ভাটার আমতলা এলাকায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নির্দেশে একটি মুদিদোকানে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ৩০ অক্টোবর দোকানের জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দোকানটিতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে দোকানে বসতে না পেরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির কাছে ছুটছেন ব্যবসায়ী লেয়াকত মণ্ডল। তাঁর বাড়ি বাঘারপাড়া উপজেলার সেকেন্দারপুর গ্রামে। তাঁর অভিযোগ, তালা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান তপন।।
গত মঙ্গলবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বাঘারপাড়া উপজেলার ভাটার আমতলা বাজার এলাকায় যশোর-মাগুরা মহাসড়ক থেকে একটি সড়ক বেরিয়ে পূর্ব দিকে চলে গেছে। সড়কটি ধরে ২০০ গজ এগোলে সড়কের ডান পাশে বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়। বিএনপির কার্যালয়ের উল্টো দিকে সড়কের বাঁ পাশে দোতলা বাড়ি। এর নিচে লেয়াকত মণ্ডলের মুদিদোকান। মুদিদোকানের সামনের দিকের ভেতরের পাশে শাটারে দুটি এবং পূর্ব পাশের বাইরের দিকে শাটারে একটি তালা লাগানো।
লেয়াকত মণ্ডল বলেন, তাঁর ছোট ছেলে শোয়াইব হোসেন মালয়েশিয়াপ্রবাসী। শোয়াইব ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সেকেন্দারপুর গ্রামের মাহমুদা খাতুনের কাছ থেকে ভাটার আমতলা বাজার এলাকায় দুই দশমিক ১০ শতক জমি কেনেন। ২০২২ সালে ওই জমির ওপর এই ভবন নির্মাণ করা হয়। সেখানে তিনি মুদিদোকান দিয়েছেন। ২০২২ সাল থেকে সেখানে তিনি ব্যবসা করছেন। দুই-তিন মাস আগে থেকে জমি বিক্রেতা মাহমুদা খাতুনের ভগ্নিপতি জাহিদুল ইসলাম তাঁর দোকানের জমি নিজের বলে দাবি করতে থাকেন।
লেয়াকত মণ্ডল বলেন, বিষয়টি নিয়ে ৩০ অক্টোবর সকালে বাজারে অবস্থিত বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে এক সালিস বৈঠক হয়। বৈঠকে বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জাহিদুল ইসলাম অনেক আগের একটি দলিল দেখান।
সালিস বৈঠকের একপর্যায়ে মনিরুজ্জামান দোকানের জমি জাহিদুল ইসলামের বলে ঘোষণা দেন। এরপর তিনি দোকানে তালা লাগিয়ে দিতে বলেন। তাঁর নির্দেশে জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে তাঁর ভাই সাইফুল ইসলামসহ তিন-চারজন দোকানের শাটার টেনে তাতে তালা লাগিয়ে দেন। দোকান বন্ধ করার আগে একটুও সময় দেওয়া হয়নি। দোকানের মধ্যে একটি ফ্রিজ এবং প্রায় দুই লাখ টাকার মালামাল রয়েছে। দোকানটিতে তালা দেওয়ার সময় ফ্যান চলছিল। সেটিও বন্ধ করা হয়নি।
লেয়াকত আরও বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। ছয় শতকের ভিটেমাটি আছে। সেখানে বাড়ি করে থাকি। ধারকর্জ করে দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। ছোট ছেলের পাঠানো টাকা দিয়ে জমি কিনে দোকান করে সেখানে দোকানদারি করি। দোকানের আয় দিয়ে পরিবারের খরচ চালাই। দোকানটি বন্ধ করে দেওয়ায় আয় বন্ধ হয়ে গেছে। দোকানের তালা খোলার জন্য অনেক চেষ্টা করছি; কিন্তু কেউ দায়িত্ব নিয়ে তালা খুলে দিতে চাচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম মুঠোফোন বলেন, ‘সালিস-বিচারে জমি আমি পেয়েছি। এ জন্য আমি দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজামানান বলেন, ‘আমি দোকানে তালা মারতে বলিনি। তালা মেরে সমাধানের পক্ষে আমি নই। বিএনপি অফিসে দুই পক্ষের কাগজপত্র দেখা হয়। তাতে দেখা যায়, জাহিদুলের জায়গায় লিয়াকত মণ্ডলের ঘর রয়েছে। সালিসে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, জমি জাহিদুলের। আমি কোনো রায় দিইনি। সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া সিদ্ধান্ত জানানোর পর জাহিদুল দোকানে তালা মেরে দেন।’