দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করা হচ্ছে: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার

ঢাকা–আগরতলা পথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী শ্যামলী পরিবহনের বাসের দুর্ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান। রোববার বেলা ১২টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা পথে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস গতকাল শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাসটি সড়কের পাশে একটি ভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এ ঘটনাকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে পরিকল্পিত হামলা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এর জবাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুর্ঘটনার কবলে পড়া বাসের চালকও। তাঁরা জানিয়েছেন, আগরতলা থেকে আসা বাসটিতে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি, এটি নিছক সড়ক দুর্ঘটনা।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই দুর্ঘটনায় বাসের যাত্রীদের কেউ আহত হননি বা আঘাত পাননি। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভ্যানচালক সামান্য আহত হয়েছেন। তবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান সুশান্ত চৌধুরী।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, শনিবার বেলা ১১টার দিকে আগরতলা থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রবেশ করে। বেলা সোয়া দুইটার দিকে বাসটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চান্দিয়ারা এলাকায় পৌঁছে। সে সময় একটি ট্রাক যাত্রীবাহী বাসটিকে অতিক্রম করতে চায়। চালক জরুরি ব্রেক কষে থামানোর চেষ্টা করলে যাত্রীবাহী বাসটি সড়কের একপাশে সরে গিয়ে একটি তিন চাকার ভ্যানকে চাপা দেয়। এতে ভ্যানচালক ইব্রাহিম মিয়া (৩০) সামান্য আহত হন। এ নিয়ে ভ্যানচালক ইব্রাহিম ও শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক মো. আসাদুল হকের মধ্যে তর্ক–বিতর্ক হয়।

পরে স্থানীয় লোকজন ভ্যানচালক ইব্রাহিমকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। খবর পেয়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রেকারের মাধ্যমে ভ্যানগাড়িটিকে উদ্ধার করে। এ সময় শ্যামলী পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি মেহেদী হাসান ও ডেলিভারি ভ্যান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আলোচনা করে মীমাংসা করেন। পরে শ্যামলী পরিবহনের বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দুর্ঘটনার বিষয়টিকে বাসে হামলা হিসেবে উল্লেখ করছে তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শ্যামলী পরিবহনের চালক মো. আসাদুল হক, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাফফর হোসেন ও খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট বায়জিদ মাহমুদ প্রমুখ।

এসপি মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, ‘একটি সাধারণ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে এবং সত্যটা জানার জন্য চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এখানে আনা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ ও অর্থায়নে চার লেন সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। স্বল্প রাস্তার এক পাশ দিয়ে যান চলাচল করে। এতে প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। ২০০৩ থেকে ঢাকা-আগরতলা পথে বাস চলাচল করে। কখনোই কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। আগরতলার স্থানীয় সাংবাদিকেরা যারা অপপ্রচার চালিয়েছে, অসত্য ও বানোয়াট একটা জিনিস, সেটি চালক নিজেই বলেছে কী ঘটেছে। আমি নিজেও তা যাচাই করেছি। এটি ছোট একটি দুর্ঘটনা। রাস্তায় চলতে গেলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি কখনো অনুভব করি বা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশ আসে যে ঢাকা-আগরতলা রুটে চলাচলকারী বাসকে নিরাপত্তা দিতে হবে, আমরা দেব। তবে আমার মনে হয় এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতি কখনোই হবে না। আমরা চাই এটার এখানেই যেন অবসান হয়। আমাদের দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে।’