সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ বিতরণ, বন্যার্তদের মুখে হাসি
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরপাড়ের দুটি গ্রামের বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। আজ সোমবার ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ইসলামপুর ও সলিমপুর গ্রামের ১০০ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়।
সহায়তা পাওয়া শাহেদা বেগম (৫৫) খাদ্যসামগ্রী পেয়ে জানালেন তাঁর খুশির কথা। তিনি বলেন, ‘বন্যাত ঘরেও কোমরপানি আছিল। পাঁচ দিন অন্যের বাড়িত থাকছি। ওখন পানি নামছে। আইয়া দেখি, ঘরের সবতা নষ্ট অই গেছে। খাইয়া, না খাইয়া দিন যায়। ওউ পয়লা আজকু সাহায্য পাইলাম। সাহায্য খানি পাইয়া বড় খুশি অইছি।’
প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা আজ দুপুরে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যান ওই গ্রামে। দুপুরের আগেই হাওরপাড়ের ইসলামপুর ও সলিমপুর গ্রামে বন্যায় বিপাকে পড়া মানুষেরা জড়ো হন ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কেউ পানি ভেঙে হেঁটে আবার কেউবা ছোট ছোট নৌকায় করে আসেন। পরে তাঁদের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। বন্ধুসভার সদস্যরা ত্রাণ নিয়ে প্রথমে ইজিবাইকে ও পরে নৌকায় করে ওই গ্রামে যান।
ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি আলু, আধা লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি লবণ, দুটি খাওয়ার স্যালাইন, একটি সাবান ও একটি গ্যাসলাইট।
গ্রামের বাসিন্দা আবু তালেবের (৬০) বসতঘরটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ছয়জনের পরিবার নিয়ে বড় কষ্টে আছেন তিনি। ত্রাণের নৌকা দেখেই ছুটে আসেন স্কুলে। খাদ্যসামগ্রী পেয়ে আবু তালেব বলেন, ‘বিশ্বাস খরইন, ঘরে দুপুরের খানির কুনতা আছিল না। এখন এই চাউল-ডাইল নিয়ে সবাইরে লইয়া খাইমু।’
ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সলিমপুরের গুলনেহার (৪৬) বলেন, ‘আমরার ইকানো কেউ আয় না। কেউ কুনতা দেয় না। বাইচ্চাইনতেরে লইয়া বড় বিপদও আছি। আজকু যে খানি পাইছি, এক সপ্তাহ চলব।’ একই গ্রামের আবদুল মালিক (৭০) বলেন, বন্যায় গ্রামের অনেকের ঘরে পানি প্রবেশ করে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশের একটি সরকারি ট্রেনিং সেন্টারে। এখন পানি নামতে শুরু করায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন লোকজন। অনেকের ঘরের খাবারের কষ্ট আছে।’
ইসলামপুরের বাসিন্দা ফয়জুদ্দিন (৫৫) খাদ্যসামগ্রী পেয়ে জানালেন, দেখার হাওরপাড়ের এই গ্রামগুলো অনেকটা দুর্গম। তাই কেউ আসতে চান না। নৌকা ছাড়া এসব গ্রামে আসা যায় না। কেউ আসতে চাইলে নৌকা ভাড়া করে আসতে হয়। গ্রামের মানুষেরা অনেক দরিদ্র।
হাওরপাড়ের এই দুর্গম গ্রামগুলোয় বন্যার্তদের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ায় প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন স্থানীয় সমাজকর্মী মনির হোসেন ও আমেনা বেগম। তাঁরা নিজেরাও ত্রাণ বিতরণে সহযোগিতা করেন।
খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা মোহাম্মদ রাজু আহমেদ, সুনামগঞ্জে স্কাউটস সংগঠক বোরহান উদ্দিন, শিক্ষক আমিনুল হক, বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি প্রদীপ পাল, বর্তমান সভাপতি সৌরভ সরকার, সদস্য কামরান আহমেদ, সমাজকর্মী আকরাম উদ্দিন, সুনামগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক খলিল রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামীকাল মঙ্গলবার জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েকটি গ্রামে একইভাবে বন্যাদুর্গত মানুষদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে।
সুনামগঞ্জে ১৬ জুন থেকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। মানুষেরা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত ভবন ও আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেন। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় বন্যায় ১ হাজার ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় ৮ লাখ মানুষ। ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয় প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। পানি নামায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িঘরে ফিরছেন। বন্যায় জেলা সদরের সঙ্গে কয়েকটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এখন সেগুলো স্বাভাবিক হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রথম আলো ট্রাস্টের এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি। বন্যার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অনুদানের টাকায় বন্যার্ত মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।