যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় চাকরিচ্যুত, কর্মকর্তার নামে আনসার সদস্যের মামলা
হবিগঞ্জে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন নারী সদস্যকে (২৭) যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে তাঁর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদ করায় চাকরিচ্যুত হয়েছেন বলে দাবি করেন ওই নারী। এ বিষয়ে তিনি আজ মঙ্গলবার আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী হবিগঞ্জ সদর উপজেলা কর্মকর্তা খালেদ আহমেদকে আসামি করে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
ওই নারী আনসার সদস্যের করা মামলাটি আমলে নিয়ে তা তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মুমিনুল হাসান। মামলায় আনসারের উপজেলা কর্মকর্তা খালেদ আহমেদ ছাড়াও আনসার দলনেতা ইলিয়াস আলী ও আনসার-ভিডিপির হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নারী প্রশিক্ষক আকলিমা আখতারকে আসামি করা হয়েছে।
ওই নারীকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে জানতে চাইলে আনসার-ভিডিপির হবিগঞ্জ জেলা কমান্ডার মির্জা সিফাত-ই-খোদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনসারের এই দলনেত্রী অফিসে কোনো অভিযোগ না করে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা খালেদ আহমেদ। তাঁর দাবি, আনসারের কোনো সদস্য বলতে পারবেন না তিনি (খালেদ আহমেদ) কখনো এ ধরনের আচরণ করেছেন। তাঁর কক্ষে ওই নারী দলনেতা ইলিয়াসের সঙ্গে আকস্মিক ঝগড়ায় লিপ্ত হন বলে দাবি করেন খালেদ।
মামলা থেকে জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এলাকার বাসিন্দা ওই নারীসহ ১৮ জন গত ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের সম্মানী ভাতা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিল আটকে রাখেন খালেদ আহমেদ। বিল পাওয়ার জন্য সম্প্রতি ওই নারী খালেদ আহমেদের কক্ষে দেখা করতে যান। তখন খালেদ তাঁর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এতে ওই নারী রাজি হননি।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ১২ সেপ্টেম্বর ওই নারীকে খালেদ আহমেদ ফোন দিয়ে জানান, বিল তৈরি আছে। সে অনুযায়ী ওই কর্মকর্তার কক্ষে বিল আনতে যান। গিয়ে দেখেন, সেখানে আগে থেকেই আনসার দলনেতা ইলিয়াস আলীসহ কয়েকজন বসা। পরে খালেদ আহমেদ তাঁদের সরিয়ে দিয়ে ওই নারীকে বসিয়ে রাখেন। বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা হঠাৎ চেয়ার থেকে ওই নারী আনসার সদস্যকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় নিজেকে ছাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করলে বাইরে অবস্থান করা দলনেতা ইলিয়াস আলী তাঁকে বাধা দেন। এ সময় আনসার কর্মকর্তা খালেদ ওই নারীকে পেটানোর জন্য ইলিয়াস আলীকে নির্দেশ দেন। তিনি নিজেও ওই নারীকে কিল-ঘুষি ও লাথি দিতে থাকেন।
মারধরে ওই নারী আনসার সদস্য গুরুতর আহত হন বলে মামলার অভিযোগে দাবি করেছেন। ঘটনার বর্ণনায় আরও বলা হয়, ঘটনাস্থলের পাশেই আনসার-ভিডিপির জেলা কমান্ডারের কার্যালয়। জেলা কমান্ডার অরূপ রতন পাল হট্টগোল ও চেঁচামেচি শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করেন অভিযুক্তরা। ফলে তাঁর বিয়ে ভেঙে যায়।
মারধরের শিকার হওয়া ওই নারী স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ২০ সেপ্টেম্বর আনসার-ভিডিপির কার্যালয়ে যায়। এতে হবিগঞ্জ জেলার এ কার্যালয়ে সদ্য যোগদান করা জেলা আনসার কামান্ডার মির্জা সিফাত–ই-খোদা ক্ষুব্ধ হন বলে ওই নারী মামলার অভিযোগে বলেছেন, জেলা কমান্ডার ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে গাড়িতে উঠিয়ে ওই দিন হবিগঞ্জ সদর থানায় মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চান। এ ছাড়া গত ২৯ অক্টোবর তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা ওই নারীর ভাইকেও একই দিনে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আনসারের ওই নারী সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামাজিক লজ্জা ও চাকরি হারানোর ভয়ে প্রথমে মামলা করিনি। যখন দেখলাম এ ঘটনার জন্য আমার বিয়ে ভেঙেছে, চাকরি গেছে, তখন মনে হলো আমার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’