তিস্তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরে প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল বিতরণ

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে লালমনিরহাটের হরিণ চওড়া এলাকায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। বিতরণ করছেন রংপুর বন্ধুসভার সদস্যরাছবি: মঈনুল ইসলাম

রহিম উদ্দিনের ডান হাতের দুই আঙুল নেই। ভারী কাজ করতে পারেন না। গ্রামে ফেরি করে ভাপা পিঠা বিক্রি করেন। একসময় বাড়ি ছিল রংপুরের গঙ্গাচড়ায়। কিন্তু তিস্তার ভাঙনে জমি-বসতভিটা  হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তিস্তায় দ্বীপের মতো জেগে ওঠা হরিণ চওড়া গ্রামের মাঝের চরে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও রংপুর বন্ধুসভার সদস্যদের সহযোগিতায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে রহিম উদ্দিনের মতো ওই চরের ২০০ অসহায় ও শীতার্ত নারী-পুরুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।

রহিম উদ্দিন বলেন, ‘হামার এটি কাইও আইসে না। কাইয়ো মনে করি, এটা রংপুর, কারও কয় লালমনি। হামরা খুব অসহায় থাকি। হামার এটি তোমরায় আগত (প্রথম) আসনেং (আসলে)।’

হরিণ চওড়া মাঝের চরের চারদিকে নদী। দক্ষিণ–পূর্বে রংপুরের হারাগাছ। উত্তরে লালমনিরহাটের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের পাকার মাথা। মধ্যে চরের প্রস্থ ৮ কিলোমিটার। চরটি মূলত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। স্থানীয় মানুষের চলাফেরা, বাজার-সদাই সব রংপুরে। কিন্তু চরটি ভৌগোলিক অবস্থান লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভৌগোলিক অবস্থার কারণে এই চরের চার শতাধিক পরিবার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই চরের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন প্রথম আলো রংপুর বন্ধুসভার সদস্যরা। কম্বল বিতরণের উদ্দেশে বন্ধুসভার সদস্যরা আজ সকাল ১০টার দিকে রংপুর শহর থেকে ১৭-১৮ কিলোমিটার পূর্বে হরিণ চওড়া গ্রামের পাকামাথা ঘাটে যান। ঘাটে নৌকায় পার হয়ে এক কিলোমিটার হেঁটে যান মাঝের চর। সেখানে বন্ধুসভার তিনজন সদস্য সকালে গিয়ে এলাকায় খোঁজ করে অসহায় মানুষের তালিকা তৈরি করেন। রংপুর থেকে ভ্যানে করে কম্বল নিয়ে গিয়ে নৌকায় পার করে দুপুর ১২টার দিকে ঘোড়ার গাড়িতে করে চরে পৌঁছানো হয়। এরপর সেখানকার জিয়ার ঘাটে শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে লালমনিরহাটের হরিণ চওড়া এলাকায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল পেয়ে খুশিতে বাড়ি ফিরছেন চরের বাসিন্দা আছিরন বেওয়া
ছবি: মঈনুল ইসলাম

চরের বাসিন্দা রত্না বেগম (৩৮) বলেন, ‘হামার এটা ছিটমহলের মতো। কারও আসে না। চরে তোমরায় প্রথম আসিলেন।’ রত্না জানান, তাঁর চার-ছেলেমেয়ে।

শীতের রাতে ছেলে–মেয়েদের নিয়ে থাকতে কষ্ট হয়। কম্বল পেয়ে তাঁদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।

কম্বল বিতরণের সময় কথা হয় উকিলা বেগমের (৭০) সঙ্গে। তিনি জানালেন, অন্যের কাজ করে চলেন। শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য তাঁর নেই। কয়েক দিন আগে স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাড়িতে গিয়েছিলেন, কিন্তু কম্বল পাননি। উকিলা বলেন, ‘রাইতোত টিন দিয়ে টপটপ করি শীত পড়ে। খ্যাতা (কাঁথা) ভিজে যায়। কম্বলকোনা পায়া হামার খুউব উপকার হইল, আর শীইত কষ্ট হমার নয়।’

কম্বল বিতরণের খবর শুনে স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম এসেছিলেন। জানালেন, মাঝের চরে চার শতাধিক পরিবার হলেও এবার তিনি দুইবারে মোট ৩৮টি কম্বল পেয়েছিলেন। সামান্য বরাদ্দে অধিকাংশ মানুষ বঞ্চিত থাকে। এ ছাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চর হওয়ায় এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও সেখানে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে আসে না। এই চরে কম্বল বিতরণ করায় প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানান আশরাফুল ইসলাম।

শীতবস্ত্র বিতরণের সময় প্রথম আলোর রংপুরে কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান, আলোকচিত্রী মঈনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বন্ধুসভার সদস্যদের মধ্যে এ সময় আবদুল্লাহ আল হাসান, কামরুল ইসলাম, সৌমিত্র বর্মণ, আওরঙ্গজেব, রুম্মান আলী উপস্থিত ছিলেন।

শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড। এই টাকায় কেনা ২০০টি কম্বল আজ লালমনিরহাটের এই চরে বিতরণ করা হয়েছে। এগিয়ে আসতে পারেন আপনিও:

সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০০০১১১৯৪

রাউটিং নম্বর: ০৮৫২৬২৫৩৯

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা

বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।

এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশান অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।