দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পাস ও জিপিএ-৫ দুটিতেই এগিয়ে মেয়েরা

মুঠোফোনের পাশাপাশি প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসেও ফলাফল দেখছে শিক্ষার্থীরা। ছবিটি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের প্রধান ফটকে।ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এবার উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তের সংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণ। তবে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ দুটোতেই এগিয়ে আছেন মেয়েরা। এবার এই বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত বছরের ফলাফলের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান স ম আব্দুস সামাদ আজাদ এক ব্রিফিংয়ে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের সচিব দেলওয়ার হোসেন প্রধান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর সাজ্জাদ আলী, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জহুরুল ইসলাম প্রামাণিক, কলেজ পরিদর্শক মো. আবু সায়েম, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানায়, এবার ৬৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ১১৫। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮৬ হাজার ৯৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছেন ২৫ হাজার ১৬১ জন। তবে শুধু এক বিষয়েই ফেল করা শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৯ হাজার ১৫৩ জন, যা শতকরা হিসাবে ১৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। এবার ২০টি কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করেননি।

ফলাফল ঘোষণা শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বোর্ডের চেয়ারম্যান স ম আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, এবার পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই বেড়েছে। সাধারণত শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিকে এসে ফলাফল ভালো করতে পারেন না। তবে এবার মাধ্যমিকের ফলাফলের সঙ্গে সমন্বয় করে উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল প্রস্তুত করা হয়েছে। এ জন্য জিপিএ-৫–এর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। আর যাঁরা ফেল করেছেন তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ এক বিষয়ে ফেল করেছেন। এবার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছেন ইংরেজি বিষয়ে।

২০টি কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস না করার বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওই কলেজগুলোতে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যাই কম। এমনও কলেজ আছে যেখান থেকে মাত্র একজন–দুজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। মন্ত্রণালয়কে বিষয়গুলো অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে গত বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ পাসের হার বাড়লেও এর আগের দুই বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে। এবার পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। যেখানে ২০২৩ সালে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ২০২২ সালে ৭৯ দশমিক ০৮ এবং ২০২১ সালে পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে বিগত দুই বছরের চেয়ে এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৪ হাজার ২৯৫, যেখানে ২০২৩ সালে ছিল ৬ হাজার ৪৫৯ জন, ২০২২ সালে ১১ হাজার ৮৩০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

পাসের হার এবং জিপিএ-৫ দুটিতেই এগিয়ে মেয়েরা

এই বোর্ডে চার বছর ধরে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটিতেই ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে থাকছেন মেয়েরা। এবার ছেলেদের পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অন্যদিকে এবার মেয়েদের পাসের হার ৮১ দশমিক ০১ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছেলেদের সংখ্যা ৬ হাজার ১৮৫। অন্যদিকে ৮ হাজার ১১০ জন মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
পাস ও জিপিএ-৫ দুটিতেই প্রথম স্থানে রংপুর জেলা

এই শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের আটটি জেলার ৬৬৫টি কলেজের পরীক্ষার্থীরা অংশ নেন। এর মধ্যে পাসের হারে প্রথম স্থানে রয়েছে রংপুর জেলা। এ জেলায় পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৯ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নীলফামারী জেলা। এ ছাড়া গাইবান্ধায় পাসের হার ৭৬ দশমিক ৮০, দিনাজপুরে ৭৬ দশমিক ৪১, লালমনিরহাটে ৭৬ দশমিক ২৯, ঠাকুরগাঁওয়ে ৭৬ দশমিক ১১, কুড়িগ্রামে ৭৪ দশমিক ৬০ এবং ৬৭ দশমিক ৯২ শতাংশ পাসের হারে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে পঞ্চগড় জেলা। একইভাবে জিপিএ-৫ এ প্রথম স্থান রংপুর জেলায় ৪ হাজার ৮৬৫ জন, দিনাজপুরে ৩ হাজার ১১০, নীলফামারীতে ১ হাজার ৭৮৮, গাইবান্ধায় ১ হাজার ৪৯৮, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার ১০৫, কুড়িগ্রামে ৯০৩, লালমনিরহাটে ৬০৬ এবং পঞ্চগড় জেলায় মাত্র ৪২০ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়েছেন।

২০ কলেজে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেননি

এবার এই বোর্ডে ২০টি কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করেননি। তার মধ্যে ছয়টি কলেজ লালমনিরহাট জেলার অন্তর্ভুক্ত। সংশ্লিষ্ট কলেজগুলো থেকে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল মাত্র ১ থেকে ৬ জন। কলেজগুলোর মধ্যে রয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলার কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গোগর কলেজ, রতনাই বগুলাবাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কদম রসূল হাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোড়লহাট জনতা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লালমনিরহাট জেলার গান্ধামারুয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সোনারহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শিয়াল খোয়া কলেজ, দুহুলি এসসি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাকিনা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, নামুরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, নীলফামারী জেলার বাগডোকরা নিমোজখানা উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, কুড়িগ্রাম জেলার গোপালপুর এমএল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শোলমারি এমআর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দিনাজপুর জেলার সনকা আদর্শ কলেজ, বোয়ালদার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তর লক্ষ্মীপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর জেলার আর্কাডিয়া ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, বড়াইবাড়ি কলেজ এবং গাইবান্ধা জেলার ফকিরহাট মহিলা কলেজ।