বৈষম্যহীন সংস্কারের নামে নতুন করে বৈষম্যের সৃষ্টি করবেন না: গয়েশ্বর রায়
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারা দেশে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া ‘রাজনৈতিক মামলা’ এখনো প্রত্যাহার না করার কঠোর সমালোচনা করেছেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের নামের মামলাগুলো তো প্রত্যাহার করে নিলেন, বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধের মামলাগুলো কেন এত দিনে প্রত্যাহার করে নিলেন না? গত ১৬ বছরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পতন আন্দোলনে কি আমরা রক্ত দিইনি? আমাদের হাজার হাজার নেতা–কর্মী খুন হয়েছে, গুম হয়েছে। বৈষম্যহীন সংস্কারের নামে নতুন করে বৈষ্যমের সৃষ্টি করবেন না।’
আজ মঙ্গলবার খুলনা নগরের শিববাড়ী মোড়ে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র এসব কথা বলেন। বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করে মহানগর ও জেলা বিএনপি। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর রায় আইন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে সারা দেশের বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানান।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করেছেন উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, ‘সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু এখনো গণতন্ত্র ফেরত পাই নাই। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজের হাতে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। এত দিন শেখ হাসিনার ফ্যাসিষ্ট দোসরদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছি। এখন অদৃশ্য ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবিলা করতে বিএনপির নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সংস্কার করতে যতটুকু সময় প্রয়োজন, সে পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেবে বিএনপি।
সমাবেশে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, ‘জনপ্রশাসন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সূক্ষ্মভাবে আওয়ামী দোসরদের দিয়ে প্রশাসন সাজাচ্ছেন। এর ফল ভালো হবে না। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী দোসরদের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলকে ধূলিসাৎ করে নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করে গণহত্যাকারীদের ফিরে আসার পথ সুগম করা হচ্ছে।’
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলমের (মনা) সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম (তুহিন) প্রমুখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু।
সমাবেশ শেষে সন্ধ্যার দিকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শিববাড়ী মোড় থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি লোয়ার যশোর রোড, পাওয়ার হাউস মোড়, ফেরিঘাট মোড়, ডাকবাংলো মোড়, পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দান, খুলনা জিলা স্কুলের সামনে ঘুরে কেডি ঘোষ রোডে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে দুপুর থেকে বিভাগের ১০ জেলার বিভিন্ন ইউনিটের বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী শিববাড়ী মোড়ে এসে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে খুলনা নগর।