ঈদের চতুর্থ দিনেও শেরপুরের গজনী অবকাশকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড়

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশকেন্দ্রের ঝুলন্ত সেতুতে বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড়। বৃহস্পতিবার দুপুরে অবকাশকেন্দ্রেছবি: প্রথম আলো

ঈদের চতুর্থ দিনেও শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশকেন্দ্রে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা দেখে। কর্মজীবনের নানা ব্যস্ততা ও শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে গারো পাহাড়ের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ছুটে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ। গত চার দিন পর্যটকেরা কেউ আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউ আসছেন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসু মানুষ গজনী অবকাশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ সেলফি তুলছেন। আবার কেউ–বা প্রিয়জনের ছবি মুঠোফোনে ক্যামেরাবন্দী করছেন। বিশেষ করে ঝুলন্ত সেতু, ভাসমান সেতু, ওয়াটার পার্ক ও গারো মা ভিলেজ কর্নারে দর্শনার্থীদের অনেক ভিড় দেখা যায়। অনেকে আবার অবকাশের লেকে প্যাডেল নৌকায় চড়ে আনন্দ উপভোগ করছেন। অবকাশের ‘চুকোলুপি’ শিশুপার্কের বিভিন্ন রাইডে চড়ে ও খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা।

গজনী অবকাশকেন্দ্রের লেকের ভাসমান সেতুর সামনে উৎফুল্ল কয়েকজন নারী দর্শনার্থী। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কানাডাপ্রবাসী আখতার আহমেদ বাংলাদেশে এসেছেন। ঈদ উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে সপরিবারে ঢাকা থেকে গজনী অবকাশে বেড়াতে এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে বেড়াতে এসে চমৎকার লাগছে। গারো পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যে আমরা মুগ্ধ।’

সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রীতম সাহা রায় বলেন, কয়েক মাস আগে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে গজনী অবকাশ সম্পর্কে ধারণা পান। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল বেড়াতে আসার। এবার ঈদের ছুটি পেয়ে গজনী অবকাশকেন্দ্রে বেড়াতে এসেছেন। ভীষণ ভালো লাগছে। পাহাড় আর বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি দেখে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে।

শেরপুর শহরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী নাহিদুল হাসান ১০ বছরের ভাতিজিকে সঙ্গে নিয়ে গজনী অবকাশের চুকোলুপি শিশুপার্কে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের আনন্দ তো শিশুদের বেশি। তাই ভাতিজিকে নিয়ে এলাম। শিশুপার্কে অনেক ভিড়। একেকটা রাইডে উঠতে প্রচুর সময় চলে যাচ্ছে। তারপরও মেয়েটা আনন্দ পাচ্ছে, তাতেই আমি খুশি।’

অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবদুর রহিম বলেন, এখানে প্রায় ১০০টি দোকান আছে। শীতকালে পর্যটন মৌসুমে বেচাকেনা ভালোই হয়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ঈদে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ঈদের দিন থেকে পর্যটকেরা বেড়াতে আসছেন। এতে দোকানগুলোয় ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। আশা করা যায়, আগামী শনিবার পর্যন্ত দর্শনার্থীদের সমাগম অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের রাতযাপনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবকাশকেন্দ্রের নিকটবর্তী স্থানে হোটেল-মোটেল স্থাপন করা গেলে এটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বাড়বে।

জেলা প্রশাসক ও অবকাশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সভাপতি তরফদার মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য গজনী অবকাশকেন্দ্রের উন্নয়নকাজ অব্যাহত আছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের মাধ্যমে অবকাশকেন্দ্রের অদূরে হোটেলসহ রিসোর্ট নির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন।

ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল-আমীন বলেন, ঈদ উপলক্ষে গজনী অবকাশকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। আগত দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারেন, সে জন্য টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে।