সংসদ নির্বাচনের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়লেন ডিআইজি নুরুলের ভাই
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি ২ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনায় আমি আগে থেকেই পদত্যাগ করলাম। পদে থেকে জনসংযোগ ও রাজনৈতিক তৎপরতা ভালোভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না বলেই পদত্যাগ করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে অনেক ভোটের ব্যবধানে আমি জয়লাভ করেছিলাম। আমার যথেষ্ট জনসমর্থন আছে। দলের মনোনয়ন পেলে সংসদ নির্বাচনেও আমি জয়লাভ করব।’
সৈয়দ নজরুল ইসলামের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় শিবগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক—ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম) ভাইয়ের সুবাদে এক ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান (সৈয়দ নজরুল ইসলাম) ও আরেক ভাই (সৈয়দ মনিরুল ইসলাম) শিবগঞ্জ পৌর মেয়র হয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁদের কোনো অবদান নেই। সৈয়দ নজরুল ইসলাম আগে অন্য দল করতেন। সৈয়দ মনিরুল ইসলামেরও আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনে কোনো সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। কেবল পুলিশ কর্মকর্তা ভাইয়ের সুবাদেই তাঁরা দুজন এখানকার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।’
যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে পাঁচ বছরের জন্য ভোট দিয়েছিলাম। তিনি পদত্যাগ করে আমার ভোটের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে মনে করি। তিনি আরও বড় পদের জন্য লোভ করছেন। আমার মতো এমনটাই মনে করেন অনেক সাধারণ কর্মী ও মানুষ।’
শিবগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামিল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়ন দেওয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি (সৈয়দ নজরুল ইসলাম) স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে আমি কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে চাই না।’
পুলিশ কর্মকর্তা ভাইয়ের সুবাদে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও সৈয়দ মনিরুল ইসলাম শিবগঞ্জের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন মন্তব্য করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ প্রথম আলোকে বলেন, অনেক আগে পদত্যাগ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মানুষের মনে ধারণা দিতে চান যে তিনিই মনোনয়ন পাবেন।
তবে পুলিশ কর্মকর্তা ভাইয়ের সুবাদে রাজনীতিতে বর্তমান অবস্থানে আসেননি বলে দাবি করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বিএনপির রাজনীতি করার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা অন্য দল করতাম না। আমাদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের একটি পরিবার হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে আমাদের অবস্থান অনেক শক্তিশালী বলেই আমরা নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচিত হওয়ার পর দলমত-নির্বিশেষে সাধারণ সব ধরনের মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেছি। এ জন্য আমাদের জনপ্রিয়তা আছে।’
গত বছরের এপ্রিলে ‘আ.লীগের রাজনীতিতে “এসপি লীগের” দাপট’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সৈয়দ নজরুল ইসলাম আগে শিবগঞ্জ মহিলা কলেজের রসায়ন বিষয়ের প্রদর্শক (ডেমোনেস্ট্রেটর) ছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর কলেজের চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। ওই কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরি করতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও দুর্লভপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুর রাজীব।
আবদুর রাজীব তখন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘১৯ বছর থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বিএনপি হিসেবে দেখে আসছি। উপজেলা নির্বাচনের তিন মাস আগে হঠাৎ শুনি, তিনি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছেন।’ সৈয়দ নজরুল ইসলাম একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন বলে প্রথম আলোকে বলেছিলেন বিএনপির সাবেক সাংসদ মো. শাজাহান মিয়াও।