ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা 

গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচু। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু তাপমাত্রার তীব্রতার কারণে গাছেই কিছু লিচু ফেটে যায়। এ বছর জেলায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। এবার জেলায় প্রথমবারের মতো বেদানা লিচু চাষ করা হয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় লিচুর চাষ হয়। জেলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ লিচুবাগান রয়েছে। ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় বিজয়নগরের কিছু ধানি জমিতেও লিচুবাগান করেছেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন বাগানে বোম্বে, চায়না টু ও চায়না থ্রি, পাটনাই জাতের লিচু চাষ করা হয়। তবে এ বছর প্রথমবার বেদানা জাতের লিচু চাষ হয়েছে। 

বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ৪৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৯০ হেক্টর জমিতে দেশীয় পাটনাই, ১১০ হেক্টর জমিতে বোম্বে লিচু, ২০ হেক্টর জমিতে চায়না থ্রি ও চায়না টুসহ অন্য লিচুর চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার বিষ্ণুপুরের ১০ হেক্টর এলাকায় বেদানা নামে নতুন জাতের লিচুর চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে লিচুগাছের সংখ্যা ৯০টি। প্রতি গাছে গড়ে আড়াই হাজার লিচুর ফলন হয়। উপজেলার ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যক্তি লিচু চাষের সঙ্গে জড়িত।

লিচুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, উপজেলার আউলিয়া বাজার, ভিটিদাউদপুর, কালাছাড়া, সেজামুড়া, কাশিমপুর, কচুয়ামোড়া, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, পাহাড়পুর, খাটিঙ্গা, মুকুন্দুপুর, মিরাসানী, কাঞ্চনপুর, কামালমোড়া, বিষ্ণুপুর, হরষপুর, নূরপুর, ধোরানাল ও নোয়াগাঁও গ্রামে বেশি লিচুর বাগান রয়েছে।

এসব এলাকায় বাড়ির আঙিনাতেও লিচুর চাষ হয়। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা উপজেলার আউলিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ও বাগান থেকে লিচু কিনে নিয়ে যান।

পাহাড়পুরের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে লিচু চাষ করেছি। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় স্বাভাবিক রং আসার আগেই বোম্বাই জাতের লিচু গাছেই ফেটে গেছে। পরে কীটনাশক স্প্রে করায় ফাটা বন্ধ হয়েছে।

বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় প্রায় ১ হাজার লিচুর বাগান রয়েছে। গরমের কারণে লিচু ফেটে গিয়েছিল। বোরন ও চিলেটেড জিংক মিশিয়ে ছিটানোর পর ফাটা বন্ধ হয়েছে।

বিষ্ণুপুর ইউপির মহেশপুর গ্রামের মাসুদুল হাসান বলেন, বৃষ্টি হলে ফলন আরও ভালো হতো। ৯০ শতক জমিতে ৬০টি গাছে লিচু চাষে তাঁর ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর ১০-১২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ২০২১ সালে করোনা মহামারির মধ্যেও বিজয়নগরে ১০ থেকে ১১ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে। গত বছর ২০২২ সালে ১৬ থেকে ১৭ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে। এ বছর এর পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা হতে পারে। এবার ১০০ পাটনাই লিচুর পাইকারি দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, বোম্বে লিচু ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চায়না টু ও চায়না থ্রি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং নতুন জাতের বেদানা লিচু ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জুনায়েদ আল সাদী বলেন, লিচুর ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর উপজেলায় ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, জেলায় ৫৬৭ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদন হয়েছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।