হবিগঞ্জ শহরের ২০০ বছরের পুরোনো দৃষ্টিনন্দন পুকুর দখলের অভিযোগ

  • শহরের রাধানগর এলাকার দুই সহোদর মাটি ফেলে দখল করে নিয়েছেন পুকুরের একাংশ।

  • পুকুরটি ‘বড় পুকুর’ হিসেবে পরিচিত। আয়তনের দিক দিয়ে হবিগঞ্জ শহরের দ্বিতীয়।

হবিগঞ্জ শহরের গোপীনাথ পুকুরের একটি অংশ মাটি ভরাট করে দখল করা হচ্ছে। দখল করা অংশে গাছের চারা রোপণ ও বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি তোলা ছবিপ্রথম আলো

হবিগঞ্জ শহরের দেড় একর আয়তনের ২০০ বছরের পুরোনো দৃষ্টিনন্দন একটি পুকুর মাটি ভরাট করে দখলের অভিযোগ উঠেছে। পুকুরটিকে অক্ষত রাখতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের শরণাপন্ন হয়েছেন পুকুরপাড়ের বাসিন্দারা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে তাঁরা লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

সরেজমিন ও এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ শহরের গোপীনাথপুর এলাকায় ১ একর ৫৩ শতক আয়তনের একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরটি চার পাড়ের বসবাসরত ৪০ থেকে ৫০টি পরিবারের মালিকানাধীন। এ পুকুরের চারপাশ ঘেঁষে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস।

শহরের গোপীনাথপুর এলাকায় ১ একর ৫৩ শতাংশ আয়তনের পুকুরটি ৪০ থেকে ৫০টি পরিবারের মালিকানাধীন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সম্প্রতি শহরের রাধানগর এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম ও আবদুল কালাম নামের দুই সহোদর পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম ও  দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ে মাটি ফেলে দখল করে নিয়েছেন পুকুরের একাংশ। এতে পুকুরপাড়ের বাসিন্দারা বাধা দেন। কিন্তু সেই বাধা অপেক্ষা করে রাতের আঁধারে মাটি ফেলা হচ্ছে পুকুরে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এ পুকুরে সালাম ও কালামের কোনো অংশ নেই। তাঁরা জোরপূর্বক পুকুরটি দখলের চেষ্টা করছেন মাটি ভরাট করে।

পুকুরপাড়ের বাসিন্দা নির্মল সূত্রধর বলেন, ‘পুকুরটি ২০০ বছরের পুরোনো। যুগ যুগ ধরে আমরা মালিকপক্ষ সমভাবে ব্যবহার করে আসছি। পুকুরটি শহরের প্রাণ। পুকুরটি বেদখল হলে শহরের পরিবেশগত মারাত্মক ক্ষতি সাধন হবে। প্রশাসনের উচিত পুকুরটিকে দখলমুক্ত করা।’

পুকুর দখলের অভিযোগের বিষয়ে সালাম বলেন, এ পুকুরে তাঁর বোন, বোনের জামাই, তাঁর মেয়ের জামাইসহ চার যুক্তরাজ্যপ্রবাসীর মালিকানায় ৫০ শতাংশ জায়গা রয়েছে। পারিবারিকভাবে ৬০ বছর ধরে তাঁরা ভোগদখল করে আসছেন পুকুরের ভূমি।

সালাম দাবি করেন, পুকুর তিনি ভরাট করেছেন কি না, তা তদন্তের বিষয়। ইদানীং পুকুরপাড়ের কিছু লোক নিজেদের মতো ভরাট ও ঘর তৈরি করছেন, দাবি তাঁর। তিনি বলেন, ‘আমারও দাবি প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্ত করে সব অবৈধ দখলকারকে উচ্ছেদ করে পুকুরকে পুকুরের রূপে ফিরিয়ে দিক।’

প্রাচীনতম পুকুরটি এলাকাবাসীর কাছে ‘বড় পুকুর’ হিসেবে পরিচিত। আয়তনের দিক দিয়ে হবিগঞ্জ শহরের দ্বিতীয়। পুকুরের চার পাড়ের বাসিন্দারা এ পুকুরে গোসল করা, তৈজস, কাপড়চোপড় ধোয়াসহ নানা গৃহস্থালি কাজে এর পানি ব্যবহার করে আসছেন।

গত মঙ্গলবার গোপীনাথপুর (চিড়াকান্দি) আবাসিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ে নতুন মাটি ফেলার দৃশ্য দেখা গেছে। পাশাপাশি নতুন মাটিতে কিছু গাছের চারা রোপণ করে এ পুকুরপাড়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুকুরের লাগোয়া রাধানগর এলাকার দুই সহোদর আবদুস সালাম ও আবদুল কালাম হঠাৎ করে পুকুরে তাঁদের অংশ আছে দাবি করে মাটি ফেলতে থাকেন। এতে এলাকাবাসী বাধা দিলেও তাঁরা মাটি ভরাটকাজ চালিয়ে আসছেন।

কথা হয় বড়পুকুর পাড়ের বাসিন্দা হরিধন সূত্র ধরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ পুকুরের মালিক পুকুরের চার পাড়ের ৪০ থেকে ৫০টি পরিবারের লোকজন। আমরা সব মালিক এ পুকুরকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রেখে ব্যবহার করে আসছি। আমরা মনে করি এ পুকুর ওই এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এখন বাইরের লোকজনের কুনজর পড়েছে এ পুকুরে। তাঁরা দখল করে অশান্তি সৃষ্টি করেছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘শহরের আলোচিত এ পুকুর ভরাটের উদ্যোগ আমাদের বিস্মিত করেছে। আমরা মনে করি, প্রশাসন এ পুকুর সংরক্ষণে যথার্থ ভূমিকা নেবে।’

বিষয়টি নজরে আনা হলে জেলা প্রশাসক মো. ফরিদুর রহমান জানান, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেয়ে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) পাঠানো হয়েছে। সরেজমিন তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘পুকুর কেউ ভরাট করতে পারে না।’