২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

অবৈধ ২৫ ইটভাটা বন্ধ হয়নি

জেলার ইটভাটাগুলোর বেশির ভাগই পড়েছে সিরাজদিখানে। উপজেলাটিতে ৫৬টি ভাটার ২৭টিই অবৈধ। এগুলোর মধ্যে বন্ধ আছে মাত্র দুটি।

ন্যাশনাল ব্রিকস নামের এই ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী অবৈধ। কিন্তু ভাটাটিতে পুরোদমে দলছে ইট পোড়ানোর কাজ। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জের অধিকাংশ ইটভাটাই সিরাজদিখান উপজেলায়। এগুলোর প্রায় অর্ধেকই অবৈধ। ভাটাগুলো বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও, তা মানা হচ্ছে না। ইট পোড়ানোর মৌসুম আসতেই আবার চালু করা হয়েছে অধিকাংশ অবৈধ ইটভাটা। তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতেও দেখা যাচ্ছে না প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে।

পরিবেশ অধিদপ্তর মুন্সিগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় বর্তমানে ৬১টি ইটভাটা রয়েছে, এর মধ্যে বৈধ ৩২টি। ভাটাগুলোর বেশির ভাগই পড়েছে সিরাজদিখানে। উপজেলাটিতে ৫৬টি ভাটার ২৭টিই অবৈধ। সম্প্রতি সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিরাজদিখানের অবৈধ ইটভাটার ২৫টিই বর্তমানে চলমান।

অবৈধ ভাটা বন্ধে কাজ করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া অভিযান চালানো যায় না। 
মো. আক্তারুজ্জামান, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, মুন্সিগঞ্জ

১৩ নভেম্বর এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দেশের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসকদের প্রতি কার্যকর নির্দেশনা দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও পরিবেশসচিবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মুন্সিগঞ্জ কার্যালয়ের পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘অবৈধ ভাটা বন্ধে কাজ করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া অভিযান চালানো যায় না। স্থায়ীভাবে অবৈধ ভাটাগুলো কীভাবে বন্ধ করা যায়, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অবৈধ ভাটাগুলোর একটি উপজেলার বালুচর এলাকার ন্যাশনাল ব্রিকস। গত রোববার ওই ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন কাঁচা ইট রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক লিয়াকত আলীর দাবি, তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র রয়েছে। এ জন্য তিনি ইটভাটার কাজ চলমান রেখেছেন। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকা থেকে জানা যায়, ভাটার কাগজপত্র না থাকায় সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল তারা।

গত রোববার বেলা দুইটার দিকে অবৈধ ভাটার তালিকায় থাকা সরকার ব্রিকস গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে চলছে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম। ভাটার মালিক আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, ‘আমাদের সবকিছুর বৈধতা আছে। তারপরও আমাদের জরিমানা করা হয়েছিল। বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’

চালু রাখতে নাম ও মালিকানা পরিবর্তন

চলতি বছরের মার্চে হাইকোর্ট ঢাকাসহ আশপাশের পাঁচ জেলার অবৈধ ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জও ছিল। নির্দেশনার পর মুন্সিগঞ্জের ভাটাগুলোয় যৌথ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। এ সময়ের মধ্যে ১৯টি ভাটাকে জরিমানা করে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি। এরপরও ভাটার কার্যক্রম চলমান রাখেন মালিকেরা। কেউ কেউ কৌশলে ভাটার নাম, মালিকানা ও ভাটা নির্মাণের জায়গার নাম পরিবর্তন করেও চালিয়ে যাচ্ছেন কার্যক্রম।

এর মধ্যে আছে বালুচর ইউনিয়নের মোল্লাকান্দি এলাকার বাউল ব্রিকস, চান্দেরচর এলাকার ধলেশ্বরী ব্রিকস, মোল্লাকান্দি এলাকার বন্ধু ব্রিকস ও বালুচর এলাকার বিসমিল্লা ব্রিকস।

পরিবেশ ও ফসলি জমির ওপর প্রভাব

সিরাজদিখানে ইটভাটার কারণে পরিবেশ, ফসল, গাছপালার ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ইট বানানোর জন্য মাটির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় দিন দিন কমছে ফসলি জমি। 

খাস মহল এলাকার কৃষক আওলাদ হোসেন বলেন, ইটভাটার কারণে কয়েক বছর ধরে এখানকার জমি একটু একটু করে কমছে। সেই সঙ্গে ইটভাটার ধোঁয়া, বালুকণা বাড়িতে এসে পড়ছে। ফসল, গাছগাছালির ক্ষতি হচ্ছে। ফসল আবাদের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল গত সোমবার বলেন, যাঁরা নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ ভাটার কার্যক্রম চলমান রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।