ছাত্রদের আন্দোলন থামানো উচিত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
দেশব্যাপী চলমান কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমি মনে করি, তাঁদের (ছাত্রদের) একটু অপেক্ষা করা উচিত, আন্দোলন থামানো উচিত। কারণ, পৃথিবীর সব জায়গায় কিন্তু কোটা রয়েছে। সব দেশেই কিছু অনগ্রসর জায়গা থাকে, যেমন আমাদের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটা রয়েছে এবং সংবিধানেও সেটি বলা আছে। এটি বাতিল করে দিলে এরা কোনো দিন সমাজের মূলস্রোতে আসতে পারবে না। আমরা মনে করছি, সবাই যেন একসঙ্গে চলতে পারে।’
আজ শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন শেষে সুধী সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বেলা দুইটায় তিনি ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনসে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর উদ্বোধন করেন। এর আগে তিনি জেলা পুলিশের বিভিন্ন থানার ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এরপর ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ: ময়মনসিংহ জেলা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন এবং সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ছাত্র ভাইদের কিছু বলার থাকলে তাঁরা রাস্তাঘাট বন্ধ না করে আদালতে এসে তাঁদের যা বলার তা যেন বলেন। রাস্তাঘাট বন্ধ করলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে, হাসপাতালগামী রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ে। যে যেখানে যাচ্ছেন, তাঁরা বাধাপ্রাপ্ত হলে ৫-৬ ঘণ্টা বসে থাকেন। সেই সাধারণ মানুষের যে কী অভিব্যক্তি, ছাত্রদের তা শোনা উচিত। আমি মনে করি, রাস্তা অবরোধ না করে আমাদের প্রধান বিচারপতি যেভাবে বলেছেন, তাঁদের সব দাবি যেন আদালতে এসে বলেন।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোটা উঠিয়ে দিয়েছিলেন। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিচার বিভাগ থেকে বার্তা এসেছে, কোটা আবার চালু হবে। এতে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন আমাদের ছাত্ররা। প্রধান বিচারপতি কিন্তু স্পষ্ট করে নির্দেশনা দিয়েছেন, আদালত যে রায়টি দিয়েছিলেন, সেটি স্থগিত করা হয়েছে এবং ছাত্রদেরও বলেছেন, তাঁরা যেন উচ্চ আদালতে যেখানে বিচারটি চলছে, সেখানে গিয়ে যেন তাঁদের কথা বলেন। যাতে করে তাঁদের যদি কিছু বলার থাকে, তাঁরা বললে সেই অনুযায়ী বিচারপতিদের বিচার করতে সুবিধা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, করোনার সময় যখন সন্তান বাবা-মায়ের কাছে যায়নি, তখন পুলিশ গেছে। এখানের পুলিশ সবার হৃদয় জয় করেছে। পুলিশ শুধু জনগণকে ভালোবাসে না, দেশের ইতিহাসকেও রক্ষা করে। নির্বাচনে পুলিশের কোনো পক্ষপাতিত্ব ছিল না। তার উদাহরণ বর্তমান আইজিপির ভাই নৌকা নিয়ে দাঁড়ালেও পরাজিত হয়েছেন। পুলিশ বাহিনী সব নির্বাচনে সঠিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শাহ আবিদ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ মোহিত উর রহমান, ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুল মালেক সরকার, ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান, ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহ্মী গোলন্দাজ, ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াহেদ, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমদাদুল হক, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া, জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আমিনুল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদ প্রমুখ।