দুই মাস ধরে নিখোঁজ ছেলে, মা–বাবা দিশাহারা
‘আইজ থাকি দুই মাস দুই দিন হয়্যা গেল ছইলটাক খুঁজি পাওয়া যাছে নাই। কুনহ জায়গাত খুঁজিবা বাকি রাখো নাই। কোনঠেনা মরার খবর শুনিলে ওর বাপ কাজকাম ফেলেয়া খালি ছটফট করোছে। থানাত যাছি, র্যাব অফিস যাছি, এত্তিউত্তি যাছি; কিন্তুক কাহো কুনহ খবর দিবার পারোছে না।’
কথাগুলো বলছিলেন নিখোঁজ কলেজছাত্র শ্রাবণ চন্দ্র দাসের (১৮) মা রীতা রানী দাস। তিনি দিনাজপুর সদরের শশরা ইউনিয়নের উমরপাইল গ্রামের নির্মল চন্দ্র দাসের স্ত্রী। গত বছর ৯ ডিসেম্বর তাঁদের ছেলে শ্রাবণ বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। শ্রাবণ বাড়িসংলগ্ন পাঁচবাড়ি মহাবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিখোঁজের পরদিন দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন নির্মল চন্দ্র দাস। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খুঁজেছেন, শ্রাবণের স্কুল-কলেজের শতাধিক বন্ধুর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন, সাক্ষাৎ করেছেন; কিন্তু ছেলের হদিস পাননি।
শুক্রবার বিকেলে নির্মল চন্দ্রের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাটির একটি ঘরে পরিবারটির বসবাস। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে নির্মলের সংসার। নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চলে তাঁর। ছেলের শোকে প্রায় শয্যাশায়ী হয়েছেন রীতা রানী। ছেলেকে খুঁজতে হন্যে হয়ে এদিক-সেদিক ছুটছেন নির্মল।
রীতা জানান, শ্রাবণ নিখোঁজ হওয়ার দিন সকাল ৮টায় তাঁর কাছে ২০ টাকা নিয়ে হোটেলে নাশতা করার কথা বলে বের হন। পরনে ছিল জিনস প্যান্ট, গায়ে নীল রঙের সোয়েটার। রীতা আরও জানান, পড়তে না বসায় মাস পাঁচেক আগে ছেলের ওপরে রাগ করে চড় মেরেছিলেন তাঁর স্বামী। তার পর থেকে মন দিয়ে পড়াশোনা করছিলেন ছেলে। মুঠোফোন চাওয়ায় তা কিনে দেওয়া হয়েছিল। নিখোঁজ হওয়ার দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত বাড়িসংলগ্ন পাঁচবাড়ি বাজারে শ্রাবণকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন অনেকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, ছেলে বাড়িতে না ফেরায় মুঠোফোনে কল করতে থাকেন তিনি; কিন্তু ফোন বন্ধ পান। এখন পর্যন্ত শ্রাবণের ফোনটি চালু হয়নি।
নির্মল চন্দ্র বলেন, ‘ছেলের স্কুল ও কলেজে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বন্ধুদের নামের তালিকা ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কেউ কোনো খবর দিতে পারছে না। গত সপ্তাহে বাড়িসংলগ্ন আত্রাই নদীর পাড়ে মানুষের মাথার খুলি পাওয়া যায়। শুনেই ছুটে গিয়েছি। হাতে টাকাপয়সাও নাই যে ঢাকা কিংবা অন্য জায়গাত খুঁজতে যাব।’
ছেলের সন্ধান পেলে ০১৭৬২৭৪০৫৫৩ নম্বরে জানাতে অনুরোধ করেন নির্মল চন্দ্র দাস।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন বলেন, শ্রাবণের বাবা থানায় একটি জিডি করেছেন। পুলিশ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে শ্রাবণের কয়েকজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় নজরদারি করছে পুলিশ।