ত্রিশালে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় শেষ হচ্ছে না সেতুর নির্মাণকাজ

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জমি অধিগ্রহণের টাকা না পেয়ে জমি ছাড়ছেন না মানুষ। আটকে আছে সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ। বৃহস্পতিবার উপজেলার পোড়াবাড়ি বাজারেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার পোড়াবাড়ি বাজারের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে খিরু নদ। নদের দুই পারের মানুষের যোগাযোগ স্থাপনে ঝুঁকিপূর্ণ একটি বেইলি সেতু আছে। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেইলি সেতুর পাশে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু অধিগ্রহণের টাকা না পেয়ে জমি ছাড়ছেন না মানুষ। এতে আটকে আছে সেতুর কাজ।

নির্মাণাধীন সেতুর পাশে প্রকল্পের তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ড থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস (এসইউপিআরবি)’ প্রকল্পের আওতায় ত্রিশাল-আছিম সড়কের মঠবাড়ি ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি বাজারে প্রায় ৭০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ২৬ আগস্ট। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দুই দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ হচ্ছে না।

এমসিই-এমএলএম (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর তিনটি স্প্যানের মধ্যে দুটি করা গেলেও একটি আটকে আছে। এখানে ১৯ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। সেই প্রক্রিয়া শেষ করে প্রকৌশল বিভাগ তাঁদের জমি বুঝিয়ে দিতে পারছে না। এ জন্য কাজও শেষ করা যাচ্ছে না। জমি বুঝে পেলে ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সেতু ও বেইলি সেতুটি পাশাপাশি। বেইলি সেতুর বিভিন্ন স্থান ভাঙা। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিভিন্ন যান চলাচল করছে। নির্মাণাধীন সেতুর এক-তৃতীয়াংশ কাজ শেষ হওয়ার পর প্রায় তিন মাস ধরে কাজ বন্ধ আছে।

কয়েকজন শ্রমিক সেতুর সংযোগ সড়ক স্থাপনে খুঁটি তৈরির কাজ করছেন। নির্মাণশ্রমিক সরদার মো. বাছির বলেন, কয়েক মাস ধরে কাজ বন্ধ আছে। মানুষ জায়গা না ছাড়ায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বেইলি সেতু দিয়ে চলাচল করা রুবায়েত হোসেন বলেন, অধিগ্রহণ জটিলতায় পাকা সেতুটির কাজ আটকে আছে। বেইলি সেতুটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কিছুদিন আগেও পাটাতন ভেঙে পড়েছিল। দ্রুত পাকা সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করে সেটি চালু হওয়া দরকার।

ময়মনসিংহের ত্রিশালের পোড়াবাড়ি বাজারের খিরু নদীতে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু। বৃহস্পতিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

সেতুটির কাজ শেষ করতে অন্তত ১০টি বসতঘর ভাঙতে হবে। নির্মাণাধীন সেতুর দুটি অংশে স্বামীহারা বাসন্তী রানী চৌধুরীর (৫৪) ৩ শতকের ভিটে পড়েছে। বিধবা এই নারীকে জমি ছাড়তে চাপ দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু অধিগ্রহণের টাকা ছাড়া তিনি জমি ছাড়তে নারাজ। বাসন্তী রানী চৌধুরী বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটেতে বসবাস করি। এই ভিটে ছেড়ে অন্য কোথাও যাব, সেই উপায় নেই। অধিগ্রহণের টাকা পেলে অন্য জায়গায় বসতি গড়ব।’

সেতুর জন্য নিজের ভিটেমাটি হারাবেন সুমন ইসলামও। তিনি বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ না করেই সেতুর কাজ শুরু হয়। কাজও শেষ পর্যায়ে। এখন আমাদের ঘর ভেঙে দিতে হবে। কিন্তু আমরা কোথায় যাব, সেই চিন্তা কারও নেই।’

ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই ব্রিজটি দ্রুত হোক। কিন্তু তার আগে আমাদের অধিগ্রহণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হোক।’

নির্ধারিত সময়ের পর দুই দফা সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সেতুটির নির্মাণকাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ত্রিশাল উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় বাকি কাজটি আটকে আছে। অধিগ্রহণের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজিম উদ্দিন বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ করতে তাঁরা কাজ করছেন।