শরীয়তপুর-১ আসনে ভোটার আনতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভূরিভোজ
শরীয়তপুর-১ (সদর-জাজিরা) আসনের ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি উপেক্ষা করে নৌকার প্রার্থী ইকবাল হোসেনের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতারা এসব আয়োজন করেছেন। ভোটকেন্দ্রের পাশে বিভিন্ন বাড়ির উঠানে, ফসলি জমির মাঠে প্যান্ডেল বানিয়ে সকাল আটটায় ভোটারদের খাওয়ানো শুরু হয়। খাবারের তালিকায় ছিল সাদা ভাত, সবজি, ডাল, গরুর মাংস, খিচুড়ি ও বিরিয়ানি।
সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা, ২০০৮-এর ১০(চ) বিধিতে বলা আছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী ক্যাম্পে ভোটারদের কোনোরূপ কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনোরূপ উপঢৌকন প্রদান করতে পারবেন না।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলা ও জাজিরা উপজেলা নিয়ে শরীয়তপুর-১ আসন গঠিত। এ আসনে ২টি পৌরসভা ও ২৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। এখানে ভোটার আছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩৯ জন। শরীয়তপুর সদর উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৭০টি এবং জাজিরা উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৬৫টি।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, জাজিরার বিলাশপুর ইউনিয়নের কাজিয়ার চর হামিদিয়া শুকুরিয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রের পাশে সাহাবুদ্দিন মাস্টারের বাড়িতে দুই হাজার মানুষের খাবার রান্না করা হয়েছে। ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ভোটারদের খাবার খাইয়ে ভোটকেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন। ওই এলাকার এক নারী ভোটার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। আগেই দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। খাবার খেয়ে ভোট দিয়েছি।’
জাজিরার আক্কেল মাহমুদ মুন্সিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশে দুটি প্যান্ডেলে পাঁচ হাজার মানুষের ভোজের আয়োজন করা হয়। শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামছুল হক খান এ আয়োজন করেন। দুপুর ১২টার দিকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে ভোটারের তেমন উপস্থিতি নেই। ৩ হাজার ৫০০ ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ৩৪০ জন তখন পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন। ভোটকেন্দ্রের পাশে একটি ফসলি জমির মাঠে প্যান্ডেল বানিয়ে সাদা ভাত, গরুর মাংস, ডাল ও সবজি রান্না করা হচ্ছে। এর পাশেই ভোটারদের তা খাওয়ানো হচ্ছে।
একটি প্যান্ডেলে খাবার রান্না করা বাবুর্চি শাহ আলম মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, চার হাজার লোকের খাবার রান্না করা হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় রান্না শুরু করা হয়েছে। রোববার সকাল আটটায় খাওয়ানো শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এলাকার ভোটাররা কষ্ট করে কেন্দ্রে আসবেন। অনেকে বাড়িতে রান্নাবান্না শেষ করে ভোটকেন্দ্রে এলে দেরি হবে। তাই কেন্দ্রের কাছে পাঁচ হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন করেছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে এ জন্য ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে ও বিভিন্ন মানুষের মাধ্যমে এলাকার মানুষদের খাবারের দাওয়াত দিয়েছেন।’
ভোটকেন্দ্রগুলোর পাশে আওয়ামী লীগের নেতাদের ভূরিভোজের আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জাজিরার ইউএনও সাদিয়া ইসলাম লুনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে এ–জাতীয় কাজ করা নির্বাচনী আচরণবিধিতে নিষিদ্ধ। তবে কারও বাড়িতে আয়োজন করা হলে আমাদের কিছু করার থাকে না। কেন্দ্রের পাশে ভূরিভোজ করানো হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে নাওডোবা এলাকায় এমন একটি আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’