মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও রেজওয়ান দুশ্চিন্তায়
গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন রেজওয়ান আহমেদ। এই খবরে রেজওয়ান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। তবে একই সঙ্গে তাঁদের মনে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা। মেডিকেলে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে তাঁর পরিবার। অর্থের অভাবে মেধাবী এই তরুণের স্বপ্ন পূরণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
রেজওয়ান আহমেদের বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলার সাতহালিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা ইব্রাহিম খলিল স্থানীয় একটি মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে অল্প বেতনে চাকরি করেন এবং মা আছিয়া খাতুন গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রেজওয়ান মেজ। ভাইবোনেরা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছেন।
রেজওয়ান আহমেদের বাবা ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অল্প বেতনে চাকরি করি। ২০১৫ সালে হঠাৎ আমার হৃদ্রোগ ধরা পড়ে। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। এখন ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি দিতে হয়। ছেলেটার মেডিকেলে ভর্তি আর পড়ালেখার খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। আগামী মাসের ২ থেকে ৮ তারিখের মধ্যে ছেলেকে ভর্তি করাতে হবে। এখনো ভর্তির টাকাই জোগাড় করতে পারিনি। বড্ড দুশ্চিন্তায় আছি।’
রেজওয়ান আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক না পাওয়ার মধ্যে বেড়ে উঠলেও তিনি শিক্ষাজীবনে প্রতিটি ধাপে সাফল্য পেয়েছেন। গ্রামের বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পাস করার পর ভর্তি হন এলাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে খুলনা সুন্দরবন কলেজে ছেলেকে ভর্তি করান রেজওয়ানের বাবা। সেখানেও জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য আনেন রেজওয়ান। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। এবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
আজ বুধবার দুপুরে রেজওয়ানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ছাপরার মধ্যে আসবাব বলতে তেমন কিছু নেই। তবে তাঁর পড়ার জন্য একটি টেবিল ও চেয়ার আছে। ঘরের মধ্যে খাটের এক কোণেও সাজিয়ে রাখা কিছু বই। সেখানে আলাপকালে রেজওয়ানের মা আছিয়া খাতুন বলেন, ‘সংসারের টানাপোড়েনের মধ্যে ছেলেকে প্রাইভেট পড়তেও দিতে পারিনি। ছেলে আমার নিজের চেষ্টায় মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তবে সেখানে ভর্তি আর পড়ালেখার সার্বিক খরচ চালিয়ে নেওয়া আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’ ছেলেকে সহায়তা করতে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
রেজওয়ান আহমেদ বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন দেখেছি। প্রথমবার না পারলেও এবার আমি ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। আমার পড়াশোনার খরচ জোগাতে মা–বাবা অনেক কষ্ট করেছেন। তাঁদের কষ্ট ঘোচানোর পাশাপাশি আমি চাই একজন মানবিক চিকিৎসক হতে। এখন স্বপ্ন পূরণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’