পড়ে ছিল বৃদ্ধার রক্তাক্ত মরদেহ, ছুরি হাতে পালালেন যুবক
ফেনীতে এক বৃদ্ধার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফেনী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফলেশ্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। হত্যার পর এক যুবককে ছুরি হাতে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজে।
নিহত নারীর নাম মাসুদা বেগম (৬৫)। তিনি ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের পিঠাপাশারী এলাকার মোস্তফা ভূঞা বাড়ির সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি গৃহকর্মীর কাজ করতেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত বৃদ্ধার স্বজনেরা জানান, সাবেক পৌর কাউন্সিলর গোলাম ফারুক ও তাঁর ভাই গোলাম কিবরিয়ার পরিবার সম্প্রতি ঢাকা থেকে ফেনীর গ্রামের বাড়িতে এলে কাজের জন্য মাসুদা বেগমকে ডেকে আনেন। মাসুদা বেগম আগেও ওই বাসায় কাজ করেছেন। ঘটনার সময় মাসুদা ছিলেন চারতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে। পরিবারের বাকিরা ছিলেন ওপরের তলায়। রাতে নিচতলায় চিৎকার শুনে ওপর থেকে নেমে আসেন কিবরিয়ার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার। এ সময় নিচতলার ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। পরে অন্যদের ডাকতে তিনি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে সুযোগ বুঝে রক্তাক্ত ছুরি নিয়ে এক যুবক ওই ঘর থেকে পালিয়ে যায়। ফের ওপরতলা থেকে কয়েকজন নিচে নেমে এলে নিচতলার ঘরের সোফার নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় মাসুদা বেগমের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত মাসুদার পুত্রবধূ রাহেনা আক্তার বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমার শাশুড়ি সাবেক পৌর কাউন্সিলর গোলাম ফারুক ও তাঁর ভাই গোলাম কিবরিয়ার ঘরে কাজ করে আসছেন। গত সোমবার ওই বাড়ির লোকজন ঢাকা থেকে বাড়ি এলে মাসুদা বেগমকে কাজের জন্য ডেকে আনা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে শাশুড়ির চাহিদানুযায়ী ওষুধ ও পান কিনে দিয়ে তিনি বাড়ি চলে যান। রাতে ফারুক কমিশনারের স্ত্রী মোবাইল ফোনে আমাদের তাঁদের বাড়িতে যেতে বলেন। বারবার কারণ জিজ্ঞাসা করলেও আমাদের কিছু বলেননি। পরে এখানে এসে দেখি, ঘরের সোফার নিচে আমার শাশুড়ির রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে।’
গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা দুই জা মিলে ভবনের তৃতীয় তলার বাসায় ছিলাম। হঠাৎ আওয়াজ শুনে নিচে এসে ভেতর থেকে ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়েছি। মাসুদাকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোর-ডাকাত সন্দেহে বাড়ির অন্যদের জানানোর জন্য ওপরে উঠতেই দরজা খুলে দৌড়ে এক যুবক পালিয়ে যায় বলে শুনেছি।’
ফেনী মডেল থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছে। নিহত বৃদ্ধার দুই কান কাটা, মুখ, চোয়াল, গলাসহ একাধিক স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৯টা ১৩ মিনিটে কালো প্যান্ট ও সাদা চেক শার্ট পরিহিত অজ্ঞাত এক যুবক ভবনে ঢুকছে। আবার ৯টা ১৭ মিনিটে ওই যুবক ভবন থেকে ছুরি হাতে দৌড়ে বের হয়ে যায়।
ওসি আরও বলেন, থানা-পুলিশের পাশাপাশি ডিএসবি, পিবিআই ও সিআইডি ঘটনাস্থলে এসে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ ও তদন্তের কাজ শুরু করেছে। সিসিটিভি ফুটেজের অজ্ঞাত ওই যুবককে শনাক্তের কাজ চলছে। এ ঘটনায় নিহত বৃদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার কার্যক্রম চলমান।