গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
হাজিরা বোনাস বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরে একটি পোশাক তৈরির কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। আজ রোববার সকাল আটটার পর থেকে সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকায় কারখানার পাশে মহাসড়কে অবস্থান নেন তাঁরা। অবরোধে মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
শিল্প পুলিশ ও কারখানা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকার মণ্ডল গ্রুপের মণ্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেয়নি। শ্রমিকেরা আজ সকালে কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা কারখানার পাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘেরবাজার এলাকায় অবরোধ করেন। এতে ঢাকাগামী ও ময়মনসিংহগামী উভয় লেনে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন ওই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্য ও শিল্প পুলিশ কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে ঘটনাস্থলে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় মহাসড়কে যানবাহনের চলাচল বন্ধ ছিল।
মণ্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিক মো. হাসিব বলেন, ‘আপনারা খোঁজ নিয়ে দেহেন সব কারখানায় হাজিরা বোনাস বাড়াইছে, কিন্তু আমাদের কারখানায় কোনো হাজিরা বোনাস বাড়াই নাই। অনেক দিন ধইরা আমরা দাবি জানাইতাছি কিন্তু মালিকের লোকজন আমাদের কথায় হোনবার চায় না। যার কারণে আমরা কাম বন্ধ কইরা আন্দোলনের নামছি।’
একই কথা জানান শ্রমিক কবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বেতন ঠিকমতো পাইলেও হাজিরা বোনাস ঠিকমতো পাই না। তাই আন্দোলনে নামছি।’
অন্যদিকে গাজীপুরের সদর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার এ্যাসরোটেক্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা ন্যূনতম হাজিরা বোনাস এক হাজার টাকা ও টিফিন বিল বৃদ্ধিসহ গ্রেড অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের আলোচনা চলছে বলে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে।
শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার এস এম আজিজুল হক বলেন, ‘দুটি কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে মণ্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেডের শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। আমরা দুটি কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।’
কালিয়াকৈরে মহাসড়ক আটকে বিক্ষোভ
পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মতো বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার একটি খাদ্যপণ্য উৎপাদন কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে তাঁদের দাবি মেনে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
কারখানার শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ জানায়, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিকদের মতো বেতন বৃদ্ধি দাবি জানান। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবিদাওয়া মেনে না নিলে আজ সকাল নয়টার দিকে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কে যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে দাবি আদায়ে সহযোগিতার করার কথা জানালে বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ ছেড়ে দিয়ে কারখানার পাশে অবস্থান নেন। এরপর সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কারখানার শ্রমিক আব্বাস উদ্দিন বলেন, তাঁদের কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। সেখানে সর্বনিম্ন বেতন দেওয়া হয় ৮ হাজার টাকা। এই টাকায় ঘরভাড়া আর খাওয়াদাওয়া করে জীবন যাপন করতে পারেন না তাঁরা। অনেক দিন ধরেই সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার দাবি জানালেও মালিকপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাঁদের কথাও শুনতে চায়নি।
মৌচাকের নিশ্চিতপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন ওই কারখানার শ্রমিক জায়েদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টসে যারা কাম করে, হেরা মানুষ, আমরা কি তাইলে মানুষ না? তাগো পেট আছে, আমাগো কি পেট নাই? গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হইছে, এহন আমাগো বেতন বাড়াইতে হইবো। নইলে আন্দোলন চালিয়া যামু, দেহি কী হয়।’
এ ছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার বক্তারপুর ইকু নিট (সামহার), উপজেলার রতনপুর এলাকার কারনি কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র সরকার বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শিল্প পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছেন।