নুর ইসলামকে সভাপতি ও রীমন আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) শাখা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে এই কমিটি ঘোষণার পরপরই সভাপতি পদ পাওয়া নুর ইসলামের কিছু পুরোনো ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা এসব ছবি নিয়ে সংগঠনের ভেতরে সমালোচনা চলছে।
নুর ইসলাম ছাত্রলীগের কোনো পদে না থাকলেও একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন কলেজ ছাত্রদলের একটি পক্ষ। তিনি কলেজের একটি হলে ‘ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাও’ ছিলেন বলে অভিযোগ তাঁদের। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বলছে, নূর ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আসছেন।
রোববার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম (রাকিব) ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রামেক ছাত্রদলের ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আংশিক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়েছে। সভাপতি পদ পাওয়া নুর ইসলাম ২০২৩ সালে এমবিবিএস শেষ করেছেন।
জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি দেওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে নূরের ছবিগুলো আমরাও পেয়েছি। রাতেই আমরা দেখেছি। এখন তার কলেজের অধ্যক্ষ এবং একজন স্বাচিপ নেত্রী-তাদের সঙ্গে তো ছবি তুলতেই পারে। কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে যায়নি; বরং ওই ফ্যাসিস্টের আমলে সে আমাদের দলে কর্মসূচিতেই দীর্ঘদিন থেকে আছে।’
কমিটি ঘোষণার পর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ছবিতে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও রাজশাহী জেলা স্বাচিবের সাধারণ সম্পাদক আনিকা ফারিহা জামানকে (অর্ণা) ফুল দিচ্ছেন নূর ইসলাম। আনিকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়ে। রামেক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোমিনুল ইসলামের সঙ্গে শোক দিবসে খাবার বিতরণ, মিছিলে অংশগ্রহণ, শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের কবর জিয়ারত করার ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে। আরেক ছবিতে আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের নেতা নওশাদ আলীর সঙ্গে কেক কাটতে দেখা যাচ্ছে নূরকে।
ছাত্রলীগে নূর ইসলামের কোনো পদ ছিল না বলে কলেজ সূত্রে জানা গেছে। কলেজ ছাত্রদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় নুরুন্নবী হলে থাকতেন নূর ইসলাম। ওই হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন নূর। তিনি ওই হলের সভাপতি প্রার্থীও ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কমিটি না হওয়ায় তিনি পদ পাননি। তার মতো একজন ছাত্রলীগকর্মীকে সভাপতি করায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়েছেন। ওই নেতা আরও অভিযোগ করেন, ‘সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে নূর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের স্বাস্থ্যসেবা উপকমিটির সদস্য ছিলেন। তাকে কীভাবে ছাত্রদল সভাপতি করা হলো সেটিই বুঝতে পারছি না।’
ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ আরেক নেতা বলেন, রামেক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোমিনুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ ছিলেন নূর ইসলাম। এ কারণে তিনি সাবেক মেয়র লিটনের বাসভবনে গিয়ে তার কন্যা ছাত্রলীগ নেত্রী আনিকা ফারিহা জামান অর্ণার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি এখন ছাত্রদল সভাপতি হয়ে গেলেন। এটা ছাত্রদলের জন্যই ক্ষতির কারণ হবে।
এ বিষয়ে নূর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৮ সালের আগে আমি তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। তখন আমি মেডিসিন ক্লাব করতাম। ওই ক্লাবের কমিটি আনার জন্য ছাত্রলীগের ছেলেরা স্বাচিপ নেত্রী আনিকা ফারিহা জামানের কাছে দোয়া চাইতে গিয়েছিলেন, আরও কয়েক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন আমাকে। তারপরে যখন জানতে পারলাম যে ওই ক্লাব ছাত্রলীগই চালাচ্ছে। তখন আমি মেডিসিন ক্লাব থেকে বের হয়ে আসি। ওদের সঙ্গেও আর যাইনি। সেই সময়ের কিছু ছবি থাকতে পারে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। আমি কখনোই ছাত্রলীগ করতাম না।
নূর ইসলামকে আগে সেভাবে চিনতেন না বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আকবর আলী। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে চিনি, সে আমাদের কর্মী হয়েছিল।’
ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে নূর ইসলামের থাকা ছবির ব্যাপারে জানতে চাইলে নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘কমিটি করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা তদন্ত করেছেন। তারপর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি দিয়েছেন। তাই এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’