‘চোখের আলো ফিরে পাব না, তবু দেশটা ভালো থাক’

বগুড়ায় প্রথম পর্বে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ৩৫ জনের হাতে সরকারি অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষেছবি: প্রথম আলো

বগুড়া শহরের নারুলী উত্তরণ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে রিয়াদ প্রামাণিক। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয়। দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও রিয়াদের এক চোখের আলো ফেরেনি। রিয়াদ বলে, ‘বাঁ চোখের আলো চিরদিনের মতো নিভে গেছে। চোখের আলো ফিরে পাব না কোনো দিন, তাতে কষ্ট নেই। তবু দেশটা ভালো থাক। দেশের মানুষ ভালো থাকুক।’

বগুড়া শহরের সাবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ (৩৮)। শহরের কাঁঠালতলা এলাকার একটি ফলের দোকানে কাজ করে সংসার চলত তাঁর। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ক্ষত সারলেও ডান চোখের আলো নিভে যায় মজিদের। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বাকি জীবন কীভাবে চলবেন, সেটা নিয়েই তাঁর দুশ্চিন্তা।

রিয়াদ প্রামাণিক কিংবা আবদুল মজিদ নন; জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে চোখ, পা বা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারানোর ক্ষত বহন করে বেড়ানো আহত ব্যক্তিরা সরকারি সহায়তার চেক নিতে এসে গণমাধ্যমকর্মীদের শোনান তাঁদের কষ্টগাথা। রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, আর্থিক সহযোগিতা, পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করতে গিয়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বগুড়ায় আহত ব্যক্তির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে প্রথম পর্বে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ৩৫ জনের হাতে সরকারি অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেজবাউল করিম, বগুড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রেজাউল হাসান, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গণেশ দাসসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের অবদান কখনো অর্থ দিয়ে শোধ হবে না। জুলাই যোদ্ধাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। তাঁদের কারণে তাঁরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছেন। বগুড়ায় আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সম্মান ও সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হলো। প্রথম পর্বে ৩৫ জনকে অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আহত ‘এ’ ক্যাটাগরির ১১ জনকে ২ লাখ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির ২৪ জনকে ১ লাখ টাকা করে চেক দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

চেক পেয়ে আবেগাপ্লুত বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের তরুণ আতিকুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করা আতিকুরের ডান পা ভেঙে যায় ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বরের কাছে পুলিশের হামলায়। আতিকুর বলেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এখনো আন্দোলন শেষ হয়নি। নতুন বাংলাদেশ ফিরে পেতে আরও সময় লাগবে হয়তো। কিন্তু আশা ছাড়িনি।’