ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার সংস্কৃতিকর্মীও শামীম ওসমানের বাস পোড়ানো মামলার আসামি

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে শীতল পরিবহনের ২৪টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলো

কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বাস পোড়ানো মামলায় ত্বকী হত্যার বিচারে সোচ্চার দুই সংস্কৃতিকর্মীসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই আন্দোলনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনার সঙ্গে শামীম ওসমানের মালিকানাধীন শীতল পরিবহনের ২৪টি বাস আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শীতল ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড পরিবহনের পরিচালক অনুপ কুমার সাহা বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে দুই সংস্কৃতিকর্মীসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।

সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যেমূলকভাবে হয়রানি করতে দুই সংস্কৃতিকর্মীকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী এজাহারে অভিযোগ করেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় ডিপোতে ২৪টি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস পার্ক করে রাখা ছিল। ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে আসামিরা হামলা চালিয়ে তাঁদের বাসের ডিপোতে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে তাঁদের সবগুলো এসি বাস পুড়ে যায়। এতে তাঁদের ১৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনসহ ৯৫ জনকে এজাহারনামীয় করে অজ্ঞাত আরও অনেককে আসামি করে মামলা করেন পরিবহনের পরিচালক অনুপ কুমার সাহা। মামলার আসামিরা অধিকাংশ বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন।

ওই মামলায় নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমল আকাশ, কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নারায়ণগঞ্জ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফারহানা মানিককেও আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের দুই নেতা তরিকুল সুজন ও অঞ্জন সরকারকেও আসামি করা হয়েছে। তাঁরা ত্বকী হত্যার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ওসমান পরিবারের বিচার চেয়ে আসছেন।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে মোট ৩২টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্তরা। অধিকাংশ মামলায় বিএনপি ও জামায়াতসহ অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তবে শুধু শামীম ওসমানের বাস পোড়ানোর মামলায় বিএনপি–জামায়াতের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংস্কৃতিকর্মীদেরও আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক সংস্কৃতিকর্মী।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজের দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। র‌্যাবের তদন্তে ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এর পর থেকে ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে প্রতি মাসের ৮ তারিখে মোমশিখা প্রজ্বালন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। সংস্কৃতিকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ওসমান পরিবার উদ্দেশ্যমূলক তাঁদের আসামি করেছে।

নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় ১২ বছর ধরে আমরা ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে আসছি। যাঁরাই বিচার চেয়েছেন, শামীম ওসমান এর আগেও তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন, তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্নভাবে বিচার চাওয়া থেকে নিবৃত্ত করতে চেয়েছেন। আজকের এই মামলা সে উদ্দেশ্যেই দিয়েছেন। ছাত্রদের আন্দোলন ঘটে যাওয়া ঘটনাকে তিনি এখন নিজের অপরাধ ঢাকার সুযোগ মনে করছেন। মামলার বাদী অনুপ কুমার সাহার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের কোনো মামলায় শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আসামি করা হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ মামলায় আসামি করে থাকতে পারেন। সেটা তাদের বিষয়। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।