স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করতে গিয়ে খুন হন গৃহবধূ, লাশ ফেলে রাখা হয় কলাবাগানে
খুলনার তেরখাদায় এক নারীকে হত্যা করে কলাবাগান থেকে লাশ ফেলে রাখার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নড়াইল জেলার কালিয়া থানা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আজ সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন নড়াইলের কালিয়ার হরিশপুর গ্রামের আনিচ সরদার ও আঙ্গুরা বেগম এবং হাড়িডাঙ্গা গ্রামের আকছের সরদার। গতকাল রোববার তেরখাদা থানার বিজয়নগর গ্রামের একটি কলাবাগানে অজ্ঞাত হিসেবে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ নিয়ে তাঁর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। নিহত ওই নারীর নাম মোসা. সাকিরন বেগম।
তেরখাদা থানা সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে নিহত সাকিরন বেগমের (৪৫) স্বামী মৃতুবরণ করলে তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় বয়রায় তাঁর ভাইয়ের বাসায় চলে আসেন। খুলনায় থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালে আনিচ সরদারের সঙ্গে সাকিরনের পরিচয় হয় এবং তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৮ সালে আনিচ সরদারের সঙ্গে সাকিরন বেগম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের একপর্যায়ে আনিচ সরদার সাকিরন বেগমকে সৌদি আরবে পাঠানোর প্রলোভন দেখান। সাকিরন আনিচ সরদারের কথায় রাজি হয়ে তাঁর গচ্ছিত টাকা দিয়ে ২০১৯ সালে সৌদি আরবে যান এবং সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় আনিচ সরদারকে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাঠান।
পুলিশ জানায়, ২০২০ সালে সাকিরন বেগম দেশে ফিরে জানতে পারেন আনিচ সরদার আঙ্গুরা বেগমকে বিয়ে করেছেন। সাকিরন আনিচ সরদারের কাছে স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করলে আনিচ সরদারসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে অস্বীকার করেন এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। বিষয়টি সাকিরন তাঁর ভাইসহ স্থানীয় লোকজনদের জানালে তাঁদের মধ্যস্থতায় আনিচ সরদার ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩ লাখ টাকা ফেরত দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
গত শনিবার বিকেলে সাকিরন বেগম টাকা নেওয়ার জন্য নড়াইলের কালিয়া থানায় আনিচ সরদারের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেন। একই তারিখ রাতে সাকিরনের মেয়ে তানজিলা আক্তারকে আনিচ সরদার ফোন করে জানান, মা সাকিরন টাকা চাইতে এবং স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করতে তাঁর (আনিচ সরদার) কাছে এসেছে। এ জন্য বাড়ির সবাই মিলে সাকিরনকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে রেখেছেন। এসে না নিয়ে গেলে তাঁরা সাকিরনকে খুন করে ফেলবে। এর পর থেকে সাকিরনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন সকালে তেরখাদার বিজয়নগর গ্রামের একটি কলাবাগনে সাকিরনের মরদেহ পাওয়া যায়।
তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল নিহত নারীর ছোটভাই তেরখাদা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আনিচ সরদারের ভাই, স্ত্রী এবং শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।