ভর্তির গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে মামলার ঘোষণা দিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ের সমন্বয়ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার তাঁর প্রথম বর্ষের ভর্তির গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সামনে এই ঘোষণা দেন তিনি। একই সময় নথি ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের পদত্যাগও দাবি করেছেন।
১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা তুলে দেয় প্রশাসন। এই আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিলেন সালাহউদ্দিন আম্মার। তিনি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে করা আন্দোলন থেকে অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকিরুল ইসলাম ওই বিভাগ নিয়ে তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দেন। তাঁর প্রতিবাদে গতকাল রাতেই বিভাগটির শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। পরে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন জাকিরুল ইসলাম।
আজ সকাল ৯টা থেকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে প্রশাসনের ভবনের পশ্চিম পাশে লিচুতলায় দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করছিলেন। সেখানে সালাহউদ্দিন আম্মারের প্রথম বর্ষে ভর্তির একটি গোপন নথি সবার হাতে হাতে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এটি সালাহউদ্দিনের নিজের হাতেও আসে। নথিতে দেখা যায়, সালাউদ্দিন আম্মার ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ‘মাদ্রাসাশিক্ষার্থী’ কোটায় ভর্তি হয়েছেন।
সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘পোষ্য কোটার মতো একটা অযৌক্তিক জিনিস নিয়ে দুই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। এই আন্দোলনের কারণে পোষ্য কোটা বাতিল হয়েছে। আজকে দেখতে পাচ্ছি, আমার ব্যক্তিগত নথি ফাঁস করা হচ্ছে। পোষ্য কোটা বাতিল হওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছে। গতকাল আমার বিভাগ নিয়ে কটূক্তি করেছে। আজকে তারা তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত নথি যুক্ত করে দিয়েছে। এ ঘটনায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অফিসার সমিতি যারা এই আন্দোলন পরিচালনা করছে, প্রতিটি সমিতির নামে আমি মামলা করব। এ ছাড়া আইসিটি বিভাগের পরিচালকের ষড়যন্ত্রের কারণে আমার নথি ফাঁস হয়েছে। অনতিবিলম্বে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গোপন নথি নিয়ে তাঁকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমি যত দিন বেঁচে আছি, আগামী দিনে যদি আমার ওপর কোনো আক্রমণ আসে, তার দায়ভার এই অফিসার সমিতি, আইসিটি পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসা লাইনে পড়া থাকলে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে সব শিক্ষার্থীই এই কোটায় ভর্তি হয়ে থাকে। এটা কোটা নয়, ওই শিক্ষার্থীর অতিরিক্ত যোগ্যতা।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এই ব্যক্তিগত গোপন নথি কীভাবে প্রকাশ্যে এল, সে বিষয়ে প্রশাসন থেকে তদন্ত করা হবে। কেউ জড়িত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে। প্রক্টর আরও বলেন, রেজিস্ট্রেশন ফরম একজন শিক্ষার্থীর গোপন নথি, যা আইসিটি সেন্টার, সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ একাধিক সেকশনে থাকে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মুক্তার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীর এই নথি প্রকাশ্যে দেখে তিনিও অবাক হয়েছেন। এটা তাঁদের কাজ নয়। হয়তো তৃতীয় কোনো পক্ষ এই কাজটি করেছে, যাতে করে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে সম্পর্ক অবনতি হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে কোনো কথা নেই। যদি এই অভিযোগ ওই শিক্ষার্থী তুলে থাকেন, তাহলে তিনি যেন মামলা করেন। তিনি (সাইফুল ইসলাম) আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করবেন।