গ্যাস–সংকট, জ্বলে না চুলা
প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকায় চুলায় গ্যাস জ্বলে না। কোনো কোনো এলাকায় রাত আটটা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না।
কনকনে ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে কুমিল্লায় তীব্র গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকায় চুলায় গ্যাস জ্বলে না। কোনো কোনো এলাকায় রাত আটটা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এতে গৃহস্থালির কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
গ্যাস-সংকটে শিল্পকারখানায়ও উত্পাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় শীত এলেই মাসের পর মাস গ্যাস থাকে না। শিগগিরই ওই সংকট দূর হবে বলে মনে করছেন গ্রাহকেরা।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় গ্রিডের পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকার কারণে কুমিল্লা নগরে শীত মৌসুমে তীব্র গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে। তার ওপর চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। তাপমাত্রা কমায় বাসাবাড়িতে গরম পানি করতে গ্যাসের ব্যবহার বহুলাংশে বেড়েছে।
বিজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) সাইফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, বিজিডিসিএলের আওতাধীন কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে পেট্রোবাংলা থেকে ২৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। ওই গ্যাসের মধ্যে ১৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুৎ খাতে ও ৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালি খাতে সরবরাহ করা হয়। তবে গত মঙ্গলবার গ্যাস পাওয়া গেছে ২৮৮ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ঘনফুট।
গত বুধবার সকাল, দুপুর ও বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরের অশোকতলা, কালিয়াজুরি, পশ্চিম বাগিচাগাঁও, রেইসকোর্স, ধর্মপুর, বিষ্ণুপুর, ছোটরা, দৌলতপুর, হীরাপুর, হজরতপাড়া ও শহরতলির জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে চুলায় গ্যাস জ্বলেনি। বিকেলের দিকে চুলায় গ্যাস এলেও চাপ কম। মিটমিট করে জ্বলে। এতে কোনো কাজ হয় না।
হীরাপুর এলাকার বাসিন্দা সালমা আক্তার বলেন, ‘হোটেল থেকে নাশতা কিনতে হয়। ভাত ও তরকারি রাতে রান্না করে রাখতে হয়। সীমাহীন দুর্ভোগে আছি আমরা।’
অশোকতলা এলাকার গৃহবধূ কামরুন নাহার বলেন, ‘গ্যাসের অভাবে রান্নাবান্না করতে পারছি না। কয়েক বছর ধরেই আমাদের এলাকায় এই সংকট দেখা দিয়েছে; কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না।’
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি তাপস কুমার পাল বলেন, ‘গ্যাস না থাকায় মাটির তৈরি উপকরণ করা যাচ্ছে না। আমাদের কারখানার পাইপলাইন এক ইঞ্চি ব্যাসের। এটা অন্তত চার ইঞ্চি করতে হবে। এই লাইন থেকে গৃহস্থালির লাইনে গ্যাস ঢুকে যাচ্ছে। ফলে আমাদের কারখানা পর্যন্ত গ্যাস আসে না।’
বাখরাবাদ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার চাঁপাপুর এলাকায় ১৯৮০ সালের ৭ জুন বিজিডিসিএলের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর ওই কোম্পানিকে দ্বিখণ্ডিত করে কুমিল্লায় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নামকরণ করা হয়। ২০১১ সালের ৩০ জুন থেকে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নামে ওই নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে গ্রাহক কম ছিলেন, এখন গ্রাহক বেড়েছে। কলকারখানা বেড়েছে। ফ্ল্যাটবাড়ি বেড়েছে। কিন্তু গ্যাসের পাইপলাইন সেই অনুযায়ী বাড়েনি। কম ব্যাসের পাইপ দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাখরাবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করেছি ১ জানুয়ারি। বিস্তারিত না জেনে বলতে পারব না।’
বাখরাবাদের মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল দপ্তর) মুর্তজা রহমান খান বলেন, শীতে অত্যধিক পরিমাণ গরম পানি করতে হচ্ছে। এতে গ্যাস ব্যবহার বেড়েছে ঘরে ঘরে। তার ওপর জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের চাপও কম। এ কারণে সংকট চলছে।