যশোরে ১২৪ নারী-পুরুষের হাতে ঈদের শাড়ি-পাঞ্জাবি তুলে দিল পূজা উদ্যাপন পরিষদ
যশোর সদর উপজেলার নীলগঞ্জ এলাকার আবদুল মোমেন দেয়াল রং করার কাজ করেন। ঈদের আগে ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে কোনো কাজ নেই তাঁর। দিনমজুর মোমেন ধারদেনা করে দুই ছেলে–মেয়ের নতুন জামা-জুতা কিনে দিয়েছেন। কিন্তু স্ত্রী ও নিজের জন্য কিছুই কিনতে পারেননি। এমনকি ঈদের দিন সেমাই- চিনি-মাংস কেনার কোনো টাকাও তাঁর হাতে নেই।
শুধু আবদুল মোমেন নন, হাসিমপুর গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন ও রংমিস্ত্রি আবদুল মজিদের মতো অনেক দিনমজুরের একই অবস্থা। আজ রোববার দুপুরে তাঁরা বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ যশোর জেলা শাখার ‘ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি’ অনুষ্ঠানে হাজির হন। এ সময় তাঁদের হাতে নতুন পাঞ্জাবি তুলে দেওয়া হয়।
এই পাঞ্জাবিই আবদুল মোমেনের এবারে ঈদের পোশাক। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে কোনো কাজ নেই। ছেলেটা মাদ্রাসায় হাফিজি পড়ে। ওর (ছেলে) মা তাকে একটা জুব্বা বানায় দেছে। ছোট মেয়ের জন্যে গতকাল একটা নতুন স্যান্ডেল কিনিছি। স্ত্রীকে নতুন একটা শাড়ি কিনে দিতে পারিনি। কাল ঈদ। ঈদে সেমাই–চিনি–মাংস কেনার কোনো টাকা নেই। যার কাছে টাকা চাতি গিছি, সেই অভাব দেখাচ্ছে। আরও দুই–একটা জায়গায় জাকাতের টাকা চাইতে যাব। দেখি, কেউ কিছু দেয় কি না।’
পূজা উদ্যাপন পরিষদের পক্ষ থেকে পাঞ্জাবি পেয়ে বেজায় খুশি কৃষক আফজাল হোসেনও। তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়ের জন্য কোনোরকমে দুই–একটা জামা কিনেছি। নিজের জন্যে নতুন পাঞ্জাবি কেনা হয়নি। পাঞ্জাবিডা পাইয়ে খুব ভালো লাগল।’
পূজা উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে গত দুই দিনে ১২৪ জন মুসলিম নারী-পুরুষের হাতে ঈদ উপহার হিসেবে নতুন শাড়ি ও পাঞ্জাবি তুলে দেওয়া হয়। আজ যশোর শহরের লালদীঘিপাড়ে অবস্থিত সংগঠনের কার্যালয়ে সমাপনী দিনে ৫০ পুরুষের হাতে পাঞ্জাবি তুলে দেওয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান।
সংগঠনের সভাপতি দীপংকর দাস রতনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান, সিআইপি শ্যামল দাস, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। গতকাল শনিবার ঈদ উপহার হিসেবে ৭৪ নারীর হাতে শাড়ি তুলে দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার রওনক জাহান।