রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে মাস্টাররোল কর্মচারীদের বিক্ষোভ, পরে প্রত্যাহার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে প্রশাসন ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মাস্টাররোলে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের ফটকে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন শুরু করেন। এতে প্রশাসন ভবনে অবরুদ্ধ পড়েন উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব, সহ-উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন খানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন তাঁরা।
বিক্ষোভের সময় কর্মচারীরা ‘চাকরি নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘এক দফা এক দাবি, এই মুহূর্তে চাকরি দিবি’, ‘ভাত-কাপড়ের আন্দোলন, চলছেই চলবে’, ‘এক হও লড়াই করো, মাস্টাররোল কর্মচারী’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। রাত আটটা পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত ছিল।
বিক্ষোভরত কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা ২০০৪ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা চাকরি স্থায়ীর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকায় তা সিন্ডিকেটে পাস হয়নি। গণ–অভ্যুত্থানের পর বর্তমান প্রশাসন চাকরি স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ বিষয়ে তাঁদের ভাইভাও নেওয়া হয়েছে। আগামী সিন্ডিকেটে বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার কথা ছিল। আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আইনজীবীদের সভা হয়। পরে প্রশাসন তাঁদের জানায় আইনি জটিলতা ও নথিপত্র না থাকায় চাকরি স্থায়ীকরণ সম্ভব হচ্ছে না। এরপর বিক্ষোভে নামেন মাস্টাররোলের কর্মচারীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, কর্মচারীরা ফটকে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় ভবনের ভেতর থেকে কাউকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। একইভাবে বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দেওয়াও হচ্ছিল না। সন্ধ্যার আগে ভবন থেকে এক কর্মকর্তা বের হতে চাইলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে কর্মচারীরা চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ফটকের তালা ভাঙচুর করেন। তাঁদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল ও ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেন। আন্দোলনের ফলে প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন উপাচার্য, দুজন সহ–উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
মাস্টাররোল কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মামুন তালুকদার বলেন, ‘আজকে আমাদের এখানে দাঁড়ানোর কথা ছিল না। প্রশাসন গত আগস্টে আমাদের কথা দিয়েছিল তিন মাসের মধ্যে আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হবে। কিন্তু স্বৈরাচারী হাসিনা যেমন আচরণ করেছিল, আমরা সেই ধরনের আচরণের ভাব দেখতে পাচ্ছি। আর কোনো লেয়াজু নয়, আমরা চাকরি চাই।’
রাত আটটার দিকে কর্মচারীদের একটি প্রতিনিধিদল অবরুদ্ধ উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে প্রশাসন ভবনের ভেতরে যায়। সেখানে উপাচার্য তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। কর্মচারীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, আগামী সিন্ডিকেট সভায় তাঁদের নিয়োগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তাঁদের চূড়ান্ত নিয়োগের বিষয়টি সম্পন্ন করা হবে।