৭ বছর পর নিখোঁজ ছেলেকে ফিরে পেলেন মা

নিখোঁজ হারুনুর রশিদকে (মাঝে) তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার রাজশাহীর বাগমারার কুমারপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

সাত বছর আগে ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন মা হনুফা খাতুন (৬০)। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। ভেবেছিলেন হারানো ছেলেকে মৃত্যুর আগে আর ফিরে পাবেন না। ফিরে পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আদরের ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন। রাজশাহীর বাগমারার কুমারপুর গ্রামের বাসিন্দা মামুনুর রশিদের প্রচেষ্টায় গতকাল বুধবার হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন মা হনুফা।

মামুনুর রশিদ বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের একটি সারের দোকানের সামনে এক যুবককে দেখতে পান তিনি। গায়ে ময়লা ও ছেঁড়া জামা। ট্রাউজার পরা অবস্থায় দোকানের বারান্দায় শুয়ে ছিলেন ওই যুবক। কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন, ওই যুবক মানসিক প্রতিবন্ধী। যুবককে নিজ বাড়িতে নিয়ে খাবার দেন তিনি। খাওয়ার পর বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়। তাঁর পরিবারের সদস্যরা পরের দিন গোসল করিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে দেন। যুবকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তিনি কোনো কথা বলছিলেন না তিনি। হতাশ হননি তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলে ওই যুবকের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর যুবকের কাছে কলম ও সাদা কাগজ দিলে তিনি তাঁর নাম লেখেন হারুনুর রশিদ। সেই সঙ্গে তাঁর বাবার নাম: নজরুল ইসলাম, গ্রাম: কালাপাড়া, উপজেলা: নালিতাবাড়ী ও জেলা শেরপুর বলে উল্লেখ করেন।

এ ঠিকানা পাওয়ার পর যুবকের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন মামুনুর রশিদ। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই যুবক সম্পর্কে জানান। ওসির মাধ্যমে কালাপাড়া গ্রামের এক গ্রাম পুলিশ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন মামুনুর রশিদ। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হারুনের পরিচয় বিষয়ে নিশ্চিত হন। শেষ পর্যন্ত গতকাল বুধবার পরিবারের সদস্যদের কাছে হারুনকে হস্তান্তর করেন মামুনুর রশিদ।

সাত বছর পর নিখোঁজ ছেলে হারুনকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত মা হনুফা খাতুন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে হারুন বড়। তাঁর ১০ বছরের একটি মেয়ে আছে। সাত বছর আগে হারুনের স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে বড় আঘাত পান। এরপর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন।

হারুনের ছোট ভাই হান্নানুর রহমান বলেন, তাঁর ভাই এসএসসি পাস করেছেন। ভাইকে কোনো দিন খুঁজে পাবেন, তা ভাবতে পারেননি। ছেলেকে হারানোর পর তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আগে কান্নাকাটি করলেও এখন চোখের জল শুকিয়ে গেছে। ভাই বাড়িতে ফিরে আসায় পরিবারে আনন্দ ফিরেছে। স্বজনেরাও হারুনকে দেখতে আসছেন।