সিলেট সিটি নির্বাচন
ভোটে আছেন, মাঠে ‘নেই’ তাঁরা
প্রতিদিন প্রচার-প্রচারণায় তৎপর আওয়ামী লীগ ও জাপার মেয়র প্রার্থী। ভোটের মাঠের প্রচারে প্রায় অনুপস্থিত পাঁচ প্রার্থী।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী আটজন। এর মধ্যে পাঁচজনের প্রতীক তো দূরের কথা, প্রার্থিতার বিষয়টিও অনেকের অজানা। ভোটাররা বলছেন, ভোটের মাঠে তাঁদের তৎপরতা খুব একটা দৃশ্যমান নয়। মাঠের প্রচারে প্রায় অনুপস্থিত তাঁরা।
একাধিক ভোটার ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আটজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুল (লাঙল) প্রতিদিনই প্রচার-প্রচারণায় তৎপর রয়েছেন। এ ছাড়া গত সোমবার রাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আগপর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসানও প্রচারণায় সরব ছিলেন।
২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোট হবে ইভিএমে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ছাড়া বাকি পাঁচ প্রার্থী হচ্ছেন জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হানিফ (ঘোড়া), মো. ছালাহ উদ্দিন (ক্রিকেট ব্যাট), মো. শাহ্ জাহান মিয়া (বাস) ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (হরিণ)।
গত পাঁচ দিন নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের অন্তত ৬০টি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ছাড়া অন্য পাঁচজন প্রার্থীর কোনো পোস্টার নেই। তবে কয়েকটি স্থানে জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হানিফ ও মোশতাক আহমেদের কিছু ব্যানার দেখা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হানিফ গণসংযোগে বের হননি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, বৃষ্টির কারণে গণসংযোগে বের হননি। বিকেলে বেরোবেন। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রতিদিনই তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে ৪২টি ওয়ার্ডে প্রচারণা শেষ করেছেন। ভোটারদের ঘরে ঘরে তিনি লিফলেট বিলি করছেন।
ব্যানার-পোস্টার দেখা না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ব্যানার টানাতে নিষেধ করেছিল। তাই নিয়ম মেনে টানাইনি। এখন দেখছি প্রার্থীরা ব্যানার টানিয়েছেন। আমিও দ্রুত টানাব। এ ছাড়া পোস্টার ঠিকই সাঁটিয়েছিলাম। বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেছে।’
গতকাল বেলা দুইটার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল আলম বলেন, তিনি নিজের মতো করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কালীঘাট এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ ছাড়া তাঁর সমর্থনে মাইকিং হচ্ছে। ব্যানারের পাশাপাশি পোস্টারও সাঁটানো হয়েছে। তবে বৃষ্টিতে পোস্টার নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে জহিরুলের অভিযোগ, মূল দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রচারণায় তাঁকে সহযোগিতা করছেন না। মাত্র ছয়জন নেতা-কর্মীকে প্রচারণায় পাচ্ছেন। বিষয়টি দলের মহাসচিবকেও জানিয়েছেন। মূলত কর্মীর অভাবেই জোরেশোরে প্রচারণা চালাতে পারছেন না।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশতাক আহমেদ বলেন, তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এরপর গত শুক্রবার থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে গণসংযোগ করছেন। নগরের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর সমর্থনে পোস্টার-ব্যানারও সাঁটানো হয়েছে।
গতকাল দুপুরের দিকে নগরের লালদীঘিরপাড়, হকার্স মার্কেট ও তালতলা এলাকায় মেয়র প্রার্থী শাহ্ জাহান মিয়া গণসংযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘টাকার অভাবে পোস্টার, ব্যানার লাগাতে পারিনি। তবে লিফলেট বিলি করছি। সাধারণ জনগণের সহযোগিতায় প্রার্থী হয়েছি। নিজের মতো করে মানুষের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। সবাই সাড়াও দিচ্ছেন।’
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ছালাহ উদ্দিন ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তিনি বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত হয়েছেন। মুঠোফোনে ছালাহ উদ্দিন বলেন, তিনি পোস্টার ছাপাননি। তবে ব্যানার সাঁটিয়েছেন। তাঁর সমর্থনে মাইকিংও চলছে। এ ছাড়া প্রতিদিন তিনি গণসংযোগের পাশাপাশি ভোট চেয়ে লিফলেট বিলি করছেন।
এদিকে গতকালও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাপার মো. নজরুল ইসলাম নগরের একাধিক এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি পথসভায় বক্তব্য দেন।
বেলা ১১টায় সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা নৌকার সমর্থনে নগরে প্রচারণা চালিয়েছেন। দুপুরে নগরের জেলরোড এলাকায় গণসংযোগ করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, সিলেট নগরের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করে নগরবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন।
নজরুল ইসলাম বেলা দুইটার দিকে লালদীঘিরপাড় এবং বন্দরবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। পরে একাধিক নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন।