মৃত মানুষের আঙুলের ছাপ দিয়ে সিম তুলে প্রতারণা করত চক্রটি

মৃত মানুষের আঙুলের ছাপ দিয়ে সিম তুলে তা দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিনজন। শনিবার সকালে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায়
ছবি: প্রথম আলো

মৃত ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ করে সেখানে থাকা আঙুলের ছাপ রাবারে তুলে সেটি দিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মুঠোফোনের সিম তৈরি করত চক্রটি। এ ছাড়া আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে বন্ধ থাকা বিভিন্ন সিম তোলা হতো। সিমগুলো ব্যবহার করে বিকাশের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা, ওটিপি পাঠিয়ে বিভিন্ন ভাতার টাকা, অনলাইনে পণ্য বিক্রির নামে টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।

আজ শনিবার দুপুর ১২টায় ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করে চক্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান। গত দুই দিন অভিযান চালিয়ে চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানান ওসি। আজ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া চক্রটির সদস্যরা হলেন হাফিজুল ইসলাম ওরফে প্রিন্স (২৯), আজিজুল হক (২৪) ও তানভীর রহমান ওরফে কাব্য (২৬)। এর মধ্যে হাফিজুল ভালুকা উপজেলার মামারিশপুর গ্রামের নাজমুল ইসলামের ছেলে। আজিজুল টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ঝটাবাড়ী গ্রামের মিরাজ আলীর ছেলে। তানভীর টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার করহাটা গ্রামের মৃত শরিফ মোল্লার ছেলে। তাঁরা তিনজনই ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে চক্রটির প্রধান হাফিজুল ইসলামকে এবং শুক্রবার রাতে চক্রের অন্য দুই সদস্য আজিজুল হক ও তানভীর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। নগরের গোহাইলকান্দি এলাকার তৃতীয় তলা ভবনের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে তাঁদের অপতৎপরতা পরিচালিত হতো। মৃত মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে মুঠোফোনে সিম নিবন্ধন করে বিক্রি করছিল চক্রটি। চক্রটির কাছ থেকে ল্যাপটপ, মুঠোফোন, বায়োমেট্রিক স্ক্যানার, রাবার পরিষ্কার করার রাসায়নিক, ফিঙ্গার হিটার মেশিন, গ্রামীণফোনের সিমের স্টিকার ২৫০টি, আঙুলের ছাপযুক্ত নেগেটিভ ৩০টি, আঙুলের ছাপ ব্যবহার করার রাবারের টুকরা ২০০টি, আঙুলের ছাপের রাবার প্লেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশি হেফাজতে থাকা হাফিজুল ইসলাম বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে তাঁর কাছে সিম দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম খুলে ওটিপি চালু করে দেওয়ার জন্য অর্ডার আসত। অনলাইনের বিভিন্ন পেজের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করে দিতেন তিনি।

গ্রেপ্তার এই তিনজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে আজ একটি মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাত পরিচয় আরও পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুরো চক্রটিকে ধরতে আমাদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজনের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ডে আনার পর আরও তথ্য বের করা হবে।’