পাঁচবিবিতে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যানকে পুলিশে দিল ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপি

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে মাসিক সমন্বয় কমিটির সভা চলাকালে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত এক চেয়ারম্যানকে ঘেরাও করেন স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁকে পুলিশ দেওয়া হয়।ছবি: প্রথম আলো

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সভা থেকে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত এক ইউপি চেয়ারম্যানকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমন্বয় কমিটির সভা চলাকালে সভাকক্ষ ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন।

হট্টগোলের এক পর্যায়ে সমন্বয় কমিটির সভা শেষ না করেই সভার সভাপতি পাঁচবিবির ইউএনও মো. মাহমুদুল হাসান এক ইউপি চেয়ারম্যানকে সভাকক্ষ থেকে বাইরে বের করে এনে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেন। এ সময় আওয়ামী লীগ–সমর্থিত অন্য আরও দুজন চেয়ারম্যানের সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। আজ সোমবার দুপুরে পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নাম নুরুজ্জামান চৌধুরী ওরফে বিপ্লব। তিনি পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাওসার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরীকে উপজেলা পরিষদ থেকে এনে জেলা পুলিশ গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) পাঠানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, আজ উপজেলা পরিষদে মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সভা ছিল। উপজেলার আটটি ইউপির চেয়ারম্যানরা মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সদস্য। বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শুরু হয়। ইউএনও, থানার পুলিশের প্রতিনিধি, কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান, প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১২টার পর আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষ হয়। মাসিক সমন্বয় কমিটির সভা শুরু হওয়ার পর বালিঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী আসেন। সমন্বয় কমিটির সভা চলছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা এসে সভাকক্ষ ঘেরাও করে নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। ছাত্র প্রতিনিধিদের কয়েকজন সভাকক্ষের ভেতরে ঢোকেন। তখন সভাকক্ষে হট্টগোল শুরু হয়। ইউএনও মাহমুদুল হাসান জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতির কথা জানান।

বেলা দেড়টার দিকে ইউএনও মাহমুদুল হাসান চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে সভাকক্ষ থেকে বের হন। এ সময় ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানের দিকে তেড়ে যান। আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রাণভয়ে সভাকক্ষ থেকে দৌড়ে উপজেলা পরিষদের একটি দপ্তরে ঢুকে দরজা আটকে দেন। নুরুজ্জামানকে পুলিশের হাতে দেন ইউএনও মাহমুদুল। পুলিশ নুরুজ্জামানকে পিকআপ ভ্যানে তুলে দ্রুত উপজেলা পরিষদ চত্বর ত্যাগ করে। এ সময় ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ–সমর্থিত অন্য চেয়ারম্যানদের খুঁজতে থাকেন। ইউএনও উপজেলা পরিষদ থেকে যাওয়ার পর ছাত্র প্রতিনিধি ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে চলে যান।

পাঁচবিবির ইউএনও মো. মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সভা ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সমন্বয় কমিটির সভার শেষ পর্যায়ে এসে স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধি, বিএনপির লোকজন সভাকক্ষের বাইরে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় সভাকক্ষের ভেতরে হট্টগোল শুরু হয়। জেলা প্রশাসক স্যারকে ঘটনাটি জানিয়ে পুলিশ ডেকে ইউপি চেয়ারম্যানকে সেইফ ইক্সিট দেওয়া হয়েছে। ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’