দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করায় নেত্রকোনায় বিএনপি ও যুবদল নেতাকে বহিষ্কার
দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল হাসান ওরফে মান্নাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
একই অভিযোগে মোহনগঞ্জ পৌর যুবদলের সদস্যসচিব ফয়সাল আহমেদকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় যুবদল থেকে জানানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিকেলে খালিয়াজুরি থেকে এক নারী পিকআপে করে তাঁর ১৯টি গরু নিয়ে আটপাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। খালিয়াজুরি-মদন সড়কের গোবিন্দশ্রী এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন ব্যক্তি পিকআপ থামিয়ে জোর করে গরুগুলো লুট করে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর অপর এক ব্যক্তি পাঁচটি গরু পিকআপে করে খালিয়াজুরি থেকে নান্দাইল নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে গোবিন্দশ্রী থেকে সেগুলোও লুট হয়। ওই দিন রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয়দের নিয়ে উদ্ধার অভিযানে নেমে মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল হাসানের বাড়ি থেকে ১৯টি গরু উদ্ধার করা হয়। বাকি গরুগুলোও বিএনপির অন্য নেতা-কর্মীদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার পর আজ রোববার সন্ধ্যায় মাহমুদল হাসানকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার কথা জানান জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী। এ বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন তিনি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গরু লুটের ঘটনা ঘটেনি। এটা ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। খালিয়াজুরি ও মদনের মধ্যে হাওরে মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষের পর ঝামেলা চলছে। ওই নারী গরু লুটের ভয়ে আমার বাড়িতে তাঁর গরুগুলো রাখার জন্য আশ্রয় চেয়েছিল। আমি সেগুলো নিরাপদে রেখেছিলাম।’
এদিকে মোহনগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে জসিম উদ্দিন (৩৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ ওঠে যুবদল নেতা ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মোহনগঞ্জ পৌর শহরের পাথরঘাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত জসিম উদ্দিন ঢাকায় রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স আফিফ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী। জসিম উদ্দিনের স্ত্রী নিশা আক্তার জানান, তাঁর স্বামী পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। গত বছরের ৬ আগস্ট যুবদল নেতা ফয়সাল আহমেদ তাঁর স্বামীর কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন ফয়সাল। গত বৃহস্পতিবার জসিম উদ্দিন ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। পরদিন শুক্রবার মোহনগঞ্জ পাথরঘাটা এলাকায় ইফতারি কিনতে যান তিনি। এ সময় ফয়সাল তাঁর সহযোগীদের নিয়ে জসিম উদ্দিনের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল শনিবার প্রথম আলোয় ‘নেত্রকোনায় চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে কোপানোর অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর মোহনগঞ্জ পৌর যুবদলের সদস্যসচিব ফয়সাল আহমেদকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুঁইয়া।
এ বিষয়ে যুবদল নেতা ফয়সাল আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনার পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।