শরীয়তপুরে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপিপন্থীরা জয়ী, অংশ নিতে বাধা আওয়ামীপন্থীদের
শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি–সমর্থিত আইনজীবীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বুধবার আইনজীবী সমিতির মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৫টি পদে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় তাঁদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সভাপতি ও জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান সাধারণ সম্পাদক হন।
আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২২ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। জেলা আইনজীবী সমিতির সম্মেলনকক্ষে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সকাল ১০টা হতে বেলা ২টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা নেন। যাঁরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাঁদের সেখানে গিয়ে কমিশনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে অন্য কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে আইনজীবী সমিতির ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা সমিতিতে প্রবেশের সব রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। অভিযোগ ওঠে, বিএনপির একটি পক্ষ সমিতির সব সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নিয়ে গেছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী হানিফ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আলমগীর হোসেন হাওলাদারকে সমিতি ভবনে তাঁদের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে ওই পক্ষ।
আইনজীবী সমিতির বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছে খবর ছিল, আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। তাঁরা বিষয়টি নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসক, জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনীকে লিখিতভাবে দুদিন আগেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো পক্ষই সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। ওই সুযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমিতির ক্যাম্পাস দখল করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।
আওয়ামীপন্থী সভাপতি প্রার্থী ও বর্তমান কমিটির সভাপতি হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাধা দিতে পারে, এমন তথ্য জেনে সকালেই সমিতিতে প্রবেশ করি। এরপর বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা আমাদের ভবন থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। দীর্ঘ সময় আমাদের চেম্বারে অবরুদ্ধ করে রাখেন। নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি অনৈতিক ও অবৈধ হয়েছে। ভোটাধিকার হরণ করায় সাধারণ আইনজীবীরা এ ঘটনা পছন্দ করেননি।’
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আলমগীর হোসেন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে চেম্বারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে আমি মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারি। সকালে আমাদের এক আইনজীবীকে মারধর করা হয়। এরপর আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সমিতি প্রতিষ্ঠার পর এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসানের চেম্বারে গিয়ে তাঁদের পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কল করলে ‘আদালতে ব্যস্ত আছেন, এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন’ বলে জাহাঙ্গীর আলম ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। আর কামরুল হাসান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিরাজুল হক আকন প্রথম আলোকে বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। কোনো পক্ষ বাধা দিয়েছে, এমন অভিযোগ কেউ করেননি। আইনজীবী সমিতির ক্যাম্পাসের বাইরে কী ঘটেছে, তাঁরা বলতে পারবেন না।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেছে, এমন তথ্য তাঁদের কাছে নেই। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিধি মেনে আদালত এলাকার অদূরে পুলিশ মোতায়েন করা ছিল।