রংপুরে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রংপুরের তারাগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের পদ বহাল রাখা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ছয়জন আহত হয়েছেন। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের পক্ষের লোকজন রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার পরিবর্তনের পর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমানকে অপসারণের দাবিতে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এরপর প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের লোকজন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর অলিয়ার রহমানের অপসারণের দাবিতে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। ওই ঘটনার পর ২১ সেপ্টেম্বর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমান আবার বিদ্যালয়ে যান। এ সময় বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁকে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেন। একপর্যায়ে অলিয়ার রহমানের ছেলে মুয়িজ হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগ হোসেনকে (২৩) মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
খবর পেয়ে তারাগঞ্জ থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে ইউএনও কার্যালয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ইউএনও কার্যালয়ে যাওয়ার পথে বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ গজ দূরে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সোহাগ হোসেন (২৩), লাভলু মিয়া (৩৪) এবং প্রধান শিক্ষকের পক্ষের মোফাজ্জল হোসেন (৫৮), কামাল হোসেন (২৪) ও নুরজাফা আক্তার (২৩) আহত হন।
এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমানের অনুসারীরা বেলা ১১টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বরাতি এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে ২ টা ৪০ মিনিটে সড়ক থেকে তাদের তুলে দেয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোহাগ হোসেন বলেন, ‘অলিয়ার রহমান বিদ্যালয়টিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ৭ জনই তাঁর আত্মীয়। আমরা তাঁর অপসারণ দাবি করলে তাঁর ছেলে ও স্বজনেরা আমাদের মারধর করেন।’
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমান বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে আমি স্বপদে বহাল থাকব। গত ২২ মার্চ সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। আজ আমি বিদ্যালয়ে গেলে সেখানে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। পরে পুলিশ আমাকে ইউএনও কার্যালয়ে যেতে বলে। সেখানে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের লোকজন আমার ওপর হামলা চালান। এতে আমার ভাই ও ভাতিজা আহত হন। মহাসড়ক কে বা কারা অবরোধ করেছে, তা আমি জানি না।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর এক পক্ষ মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয়। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’