আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যে অনুসন্ধান কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে সশরীর উপস্থিত হয়ে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন চৌধুরীর স্বাক্ষর করা নোটিশ কাজী জাফর উল্যাহকে পাঠানো হয়েছে।
কাজী জাফর উল্যাহ সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার সময় অনুসন্ধান কমিটির কাছে একটি ভিডিও চিত্র জমা দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী। নিক্সন চৌধুরী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
শোকজের নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কাজী জাফর উল্যাহ ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ৪ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী আজ (১৩ ডিসেম্বর) একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন, আজ ভাঙ্গা উপজেলার শেখপুরা বাজারে মাইক বাজিয়ে গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন কাজী জাফর উল্যাহ। ওই অভিযোগের সঙ্গে তিনি একটি ভিডিও ক্লিপ জমা দিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়, নিক্সন চৌধুরীর জমা দেওয়া ভিডিও পর্যালোচনা করে কমিটি দেখেছে, কাজী জাফর উল্যাহ শেখপুরা বাজারে এলাকাবাসী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন এবং একটি সভায় যোগদান করেন। ওই সভায় জাফর উল্যাহকে বলতে শোনা যায়, ‘এমপি তো যে আছে সে তো আমাদের এলাকার না। সে হলো মাদারীপুর থেকে শিবচরের। সে আসছে এখানে বালি কাটতে, সে আসছে টাকা বানাতে, আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনে করতে কি সে আসছে? সে বলে কাজী মাহাবুল্লাহ একটা চোর। সে বলে যে আমি ফকিরের গোষ্ঠীর লোক। ফকিন্নির ছেলে। আপনারা বুঝতে পারছেন যে আমারে যদি এ কথা কয়, কাজী মাহাবুল্লাহরে যদি এই কথা কয়, তাহলে আপনাদের কী অবস্থা করবে। তার যে কতটা হিংসা–বিদ্বেষ।’
কাজী জাফর উল্যাহর ওই বক্তব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা, ২০০৮–এর বিধি ১১ (ক) ধারা পরিপন্থী বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সভার ব্যাপারে লিখিত অনুমতি গ্রহণ ও স্থানীয় পুলিশকে না জানিয়ে সভায় অংশগ্রহণ আচরণবিধিমালার বিধি ৬ (খ) ও (গ) লঙ্ঘন। এ ছাড়া সভার শেষে কাজী জাফর উল্যাহর দেওয়া বক্তব্য ‘ইনশা আল্লাহ এবার আমরা প্রমাণ করে দিব এই এলাকার মানুষ তারা নৌকাকে ভালোবাসে, নৌকা প্রতীককে ভোট দিবে, কাজী জাফর উল্ল্যাহকে ভোট দিবে’ বিধিমালার ১২ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
নোটিশে কাজী জাফর উল্যাহকে বলা হয়, আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কেন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ পাঠানো হবে না, সে ব্যাপারে ১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যে অনুসন্ধান কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।
এর আগে ২৯ নভেম্বর গাড়িবহর নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘটনায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ৩০ নভেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছিল নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। ১ ডিসেম্বর বেলা তিনটায় সশরীর নিক্সন চৌধুরী কমিটির কাছে শোকজের জবাব দেন। ওই সময় কমিটির কাছে তিনি ভবিষ্যতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।