পঞ্চগড়ে নিখোঁজ রিকশাচালককে হত্যার মামলায় নূরুল ইসলাম কারাগারে

পঞ্চগড় আদালতে জামিন শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় আদালত থেকে কারাগারে নেওয়া হয় সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামকেছবি: প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া আল আমিন (২১) নামের একজন নিখোঁজ রিকশাচালককে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে হওয়া একটি মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রোববার সকালে পঞ্চগড় আদালতে জামিন শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুজ্জামান জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আদম সুফি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জামিন শুনানির সময় মামলার বাদী উপস্থিত ছিলেন না বলে তিনি জানান। এই মামলায় নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও তিনি জানান।

এর আগে নূরুল ইসলামকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ সকাল ১০টার দিকে পঞ্চগড় আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাঁর জামিন আবেদন করেন। গত শনিবার রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাঁকে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে আনে।

গত ১০ নভেম্বর নিখোঁজ রিকশাচালক আল আমিনের বাবা মো. মনু বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় সাবেক রেলমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলামসহ ১৯ জনের নামে একটি মামলা করেন। নূরুল ইসলাম এ মামলায় হুকুমের আসামি। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নিখোঁজ আল আমিন পঞ্চগড় পৌরসভার দরজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। তাঁর চার বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। আল আমিন পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ, আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে পঞ্চগড় জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন আল আমিন। সেদিন দুপুরে দুই তরুণের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান সাকিবের বাড়ির সামনে তাঁকে আটক করেন মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কয়েকজন। পরে আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আল আমিনকে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। তারপর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে ছাত্রলীগ নেতা সাদমান সাকিবের বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আল আমিনের সঙ্গে থাকা রায়হানুল ইসলাম ও সুজন ইসলাম নামের দুই তরুণ আহত হন। তবে তাঁদের দুজনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করলেও আল আমিনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর পর থেকেই আল আমিনকে খুঁজছিল তাঁর পরিবার। খোঁজ না পেয়ে ১৪ আগস্ট পরিবারের পক্ষ থেকে পঞ্চগড় সদর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। এদিকে আহত ওই দুই তরুণের মাধ্যমে এ ঘটনা জানতে পেরে নিখোঁজের তিন মাস পর সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করে মামলা করেন আল আমিনের বাবা।

আজকের শুনানি শেষে মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী মির্জা সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই মিথ্যা মামলাটি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হয়রানি করার জন্য করা হয়েছে। যেহেতু ভুক্তভোগী নিখোঁজ আছেন, সে ক্ষেত্রে এখানে কীভাবে হত্যা মামলা হয়? আমরা এই মামলার বিরোধিতা করে নূরুল ইসলামের জামিন আবেদন করেছি। কিন্তু আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। তবে আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামির ডিভিশন মঞ্জুর করেছেন।’

গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা একটি হত্যা মামলায় সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর থেকে তিনি ঢাকায় কারাগারে ছিলেন।