বিষের বিপদে ‘রক্ষক’ সুন্দরবন
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের সবচেয়ে বড় রক্ষক সুন্দরবন আজ নিজেই বিপদে। পড়ুন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে প্রথম আলোর অনুসন্ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট একের পর এক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বুক পেতে ঠেকিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। শুধু ঝড়-জলোচ্ছ্বাসেই নয়; লবণাক্ততা ও উষ্ণতা বৃদ্ধি, অচেনা রোগবালাই আর কীটপতঙ্গের আক্রমণেও দেশের এই অতন্দ্র প্রহরী এখন ক্ষতবিক্ষত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অসাধু মানুষের অত্যাচার। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের সবচেয়ে বড় রক্ষক সুন্দরবন আজ নিজেই বিপদে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধান বলছে, এ মুহূর্তে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো বনের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। এই অপতৎপরতার পেছনে কাজ করছে প্রভাবশালী অন্তত তিনটি গোষ্ঠী। প্রথমটি হলো বন উপকূলের একশ্রেণির মাছ ব্যবসায়ী, যাঁদের বলা হয় কোম্পানি মহাজন। তাঁরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জেলেদের প্ররোচনা দেন বিষ ছিটিয়ে দ্রুত বেশি মাছ শিকারে। আরেক গোষ্ঠী হলো অসাধু বনরক্ষী। কোম্পানি মহাজনদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তারা অভয়ারণ্যের নদী-খালে ঢুকে বিষ ছিটিয়ে মাছ ধরার সুযোগ করে দেন। এই দুই দলের সঙ্গে সম্প্রতি আবার যুক্ত হয়েছে বনদস্যুরা। এই চক্রটিকে সহযোগিতা করছেন এক শ্রেণির সাংবাদিক।
আমরা বিভিন্ন সময় সুন্দরবনে অসাধু জেলেদের কাছ থেকে বিষের বোতল কিংবা বিষ দিয়ে ধরা মাছ আটক করেছি। দেখেছি বেশির ভাগ বিষই বিভিন্ন শাকসবজি, গাছপালার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার করা হয়। জেলেরা দুই ধরনের বিষ ব্যবহার করেন। একটা সাদা মাছের জন্য, আরেকটি চিংড়ির জন্য।খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো
সুন্দরবনের হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাবিত মাহমুদ বললেন, ‘বনের ভেতরে জেলেদের সঙ্গে দেখা হলে অনেকেই বলে, তাদের মহাজন ওমুক সাংবাদিক। কয়রা উপজেলার এক সাংবাদিকের নাম শুনলাম, সুন্দরবনে পারশে পোনার অবৈধ ব্যবসা করে তিনি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।’
এক বন কর্মকর্তা বললেন, অনেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রতি মাসে ফরেস্ট স্টেশন থেকে মাসোহারা নিয়ে যান। এরকম অন্তত ১০ জন সাংবাদিকের নাম তিনি জানেন, যাঁদের প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। অনেক বছর ধরে এই রেওয়াজ চলে আসছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণের পর যে বনদস্যুরা নিষ্ক্রিয় ছিল, অসাধু মাছ ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা আবার সুন্দরবনে নেমেছে। এই ডাকাতেরা নির্দিষ্ট কোম্পানি মহাজনের নিয়োজিত জেলেদের সুরক্ষা দেয়, আর অন্যদের ডাকাতি করে। এ কারণেই সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরার তৎপরতা বেড়ে গেছে।
প্রায় ৫৫ বছর ধরে সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরেন কয়রার উত্তর বেদকাশী এলাকার জেলে গোবিন্দ মণ্ডল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে বিষ দিয়ে মাছ ধরার চল ছিল না। তখন অনেক বেশি মাছ পেতাম। গত পাঁচ-ছয় বছর হলো বনে বিষ ঢুকেছে। এখন আর আগের মতো মাছও পাওয়া যায় না; পাখিও নাই বনে।’
বিষে নীল সুন্দরবন
একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে ‘সুন্দরবনের জলজ সম্পদের মূল্যায়ন’বিষয়ক একটি প্রকল্পে কাজ করেন মো. শাহ পরান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি আট মাস ধরে প্রতিদিন সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার মৎস্য আড়তে গিয়ে মাছের প্রজাতি হিসাব করি। তবে আড়তে বিষ দিয়ে ধরা মাছ বেশি আসে। বিশেষ করে চিংড়ি থেকে বিষের উৎকট গন্ধ বেশি আসে। স্থানীয় মানুষ সুন্দরবনের মাছ খায় না। বিষাক্ত মাছগুলো সব ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়।’
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় সুন্দরবনে অসাধু জেলেদের কাছ থেকে বিষের বোতল কিংবা বিষ দিয়ে ধরা মাছ আটক করেছি। দেখেছি বেশির ভাগ বিষই বিভিন্ন শাকসবজি, গাছপালার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার করা হয়। জেলেরা দুই ধরনের বিষ ব্যবহার করেন। একটা সাদা মাছের জন্য, আরেকটি চিংড়ির জন্য। কিছু বিষ এমন যা পানিতে মেশালে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়; মাছ দুর্বল হয়ে মারা যায়। বিষে মরা মাছ, কাঁকড়া এসব যদি পাখি খায় তাহলে পাখিও মারা যেতে পারে। ওই মাছ খেলে তো মানবদেহের ক্ষতি হওয়ারই কথা।’
বন সংরক্ষকের কথার সূত্র ধরে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার কয়েকটি কীটনাশক বিক্রির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, দেদার বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের কীটনাশক। এমন লোকদেরও কীটনাশক কিনতে দেখা গেল, যাঁদের চাষাবাদের একখণ্ড জমিও নেই। এক বিক্রেতা জানালেন, গাছ কিংবা সবজিতে ব্যবহারের কথা বলে ডায়মগ্রো, ফাইটার, রিপকর্ড, পেসিকল নামক কীটনাশকই বেশি কেনেন সুন্দরবনের জেলেরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যেসব বিষে ক্লোরপাইরিফস ও সাইপারমেথ্রিন নামে দুটি উপাদান আছে, সেগুলো ব্যবহারে সাদা মাছ ও চিংড়ি দুটিই মরে। আর যে বিষে শুধু সাইপারমেথ্রিন আছে, তাতে শুধু চিংড়ি মরে।
আগে বিষ দিয়ে মাছ ধরার চল ছিল না। তখন অনেক বেশি মাছ পেতাম। গত পাঁচ-ছয় বছর হলো বনে বিষ ঢুকেছে। এখন আর আগের মতো মাছও পাওয়া যায় না; পাখিও নাই বনে।কয়রার উত্তর বেদকাশী এলাকার জেলে গোবিন্দ মণ্ডল
বিষ দিয়ে মাছ ধরার অপরাধে জেল খেটে ছাড়া পাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার এক জেলে বলেন, ‘কয়েক বছর আগে থেকে অল্প সময়ে অনেক বেশি মাছ ধরতে বিষ দেওয়া শুরু করি। মূলত বনের মধ্যে জোয়ারের পানিতে খাল ভরে উঠলে দুই প্রান্তে ছোট ফাঁসযুক্ত ভেশালি দিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। এরপর ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করলে ওই ফাঁদের মধ্যে নাইট্রো ও রিপকটজাতীয় কীটনাশক ঢেলে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে মাছগুলো ভেসে ওঠে।’
জেলেরা আরও জানান, বিষ দিয়ে চিংড়ি শিকার করেও লোকালয়ে আনা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। তখন বনের মধ্যেই চিংড়ি শুকানোর ব্যবস্থা করা হয়। গহিন বনের ভেতরে গাছ কেটে অস্থায়ী মাচা করে তার নিচে গাছের টুকরায় আগুন দিয়ে চিংড়ি শুকানো হয়। তারপর কৌশলে মোংলায় পাঠানো হয়।
সুন্দরবনের নদী-খালে বিষের ব্যবহারে জলজ প্রাণীর পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ ফরেস্টেরও সুদূরপ্রসারী ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের (সিইপিআর) চেয়ারপারসন গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, ‘সুন্দরবনের পানিতে জেলেরা যে ধরনের বিষ ছিটান, সেগুলো মূলত ফল ও কৃষিপণ্যে পোকা দমনে ব্যবহারের জন্য। ওই বিষাক্ত পানি মাটি থেকে শিকড়ের মাধ্যমে গাছের মধ্যেও যাচ্ছে। এতে গাছেও বিরূপ প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক। ওই বিষাক্ত মাছ খাওয়ায় মানবশরীরের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে ক্যানসার।’ বিষয়টি নিয়ে সুনির্দিষ্ট গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
কোম্পানি-বনরক্ষী যোগসাজশ
মো. জাহাঙ্গীর সরদার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন ৪ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা। সুন্দরবনে ঢোকার বৈধ অনুমতির আড়ালে ঘুষ দিয়ে অভয়ারণ্যে যেসব জেলে বিষ ছিটিয়ে মাছ ধরতে যান, জাহাঙ্গীর তাঁদের একজন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে শিখেছি বনে মাছ ধরা। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, বন বিভাগের ঘুষের অঙ্ক তত বাড়ছে। কয়েক বছর আগেও আমাদের কাছ থেকে প্রতি গোনে (৭ দিনে) এক হাজার টাকা নিত। আর এখন প্রতি নৌকায় ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। মহাজনের মাধ্যমে বনরক্ষীদের ঘুষের টাকা দিয়েই বনের নিষিদ্ধ এলাকায় যাই; মাছ ধরেই সেই খরচ তুলি।’
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটার অভয়ারণ্য। সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, সুন্দরবনের অর্ধেকের বেশি আয়তনের অভয়ারণ্য এলাকায় জেলেদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সুন্দরবনের পানিতে জেলেরা যে ধরনের বিষ ছিটান, সেগুলো মূলত ফল ও কৃষিপণ্যে পোকা দমনে ব্যবহারের জন্য। ওই বিষাক্ত পানি মাটি থেকে শিকড়ের মাধ্যমে গাছের মধ্যেও যাচ্ছে। এতে গাছেও বিরূপ প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক। ওই বিষাক্ত মাছ খাওয়ায় মানবশরীরের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে ক্যানসার।সিইপিআর চেয়ারপারসন গৌরাঙ্গ নন্দী
কিন্তু সাধারণ জেলে, বাওয়ালি, মৌয়াল ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশাল এ বনের সবখানেই সারা বছর সক্রিয় থাকেন বিষ দিয়ে মাছ ধরা জেলেরা। অভয়ারণ্যে বেশি মাছ পাওয়া যায়। মাছের ঘাটগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন কোম্পানির মহাজনেরা।
অভিযোগ আছে, এই সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো জেলে অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধরতে গেলে বন বিভাগের লোকজন দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিষ ছিটিয়ে নির্বিঘ্নে মাছ ধরার টিকিট পেতে কোম্পানি মহাজনদের তালিকাভুক্ত জেলে হতে হয়। এই প্রথা সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বনজীবী জেলেরা জানান, কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার ২৫ থেকে ৩০ জন ব্যবসায়ী বনরক্ষীদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে সারা বছর মাছ ও কাঁকড়া শিকার করেন। আর কোম্পানি মহাজন বলে জেলেদের কাছে যাঁরা পরিচিত, তাঁদের মধ্যে জুলফিকার আলী, লুৎফর রহমান, রেজাউল করিম, সাহেব আলী, আমিরুল ইসলাম, নুর হোসেন, হাবিবুল্লাহ, আবু মুছা, মাজেদ, কামরুল, মিন্টু, হালিম, রজব আলী, বাশার, মাসুম, মফিজুল, মোজাফ্ফর, আবদুল খালেক, জহির মেম্বর, আশরাফুল ইসলাম, শাহাজুল ও রিয়াছাদ আলী অন্যতম।
কোম্পানি মহাজন আবু মুছা সুন্দরবনের অভয়াশ্রমে জেলেদের পাঠিয়ে অবৈধ ব্যবসা চালু রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, বনের মধ্যে বিষ বন্ধ করতে হলে অভয়ারণ্য এলাকাগুলো মহাজনদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। এক মহাজনের এলাকায় অন্য জেলেদের ঢুকতে দেওয়া যাবে না। বনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বেশি টাকা পেলেই একজনকে সরিয়ে অন্যদের দেন। এক গোন মাছ ধরার পর আবার মাছ ধরায় অনিশ্চয়তা থাকায় জেলেদের হাতে বিষ তুলে দেন মহাজনেরাই।
সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় কোন কোন কোম্পানি মহাজনের জেলেরা মাছ ধরেন, জানতে চাইলে আবু মুছা বলেন, ‘সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় মহাজন হচ্ছেন দাকোপ এলাকার জহির মেম্বার ও বাবুল। অভয়ারণ্যে তাঁদের অধীনে ২০০ থেকে ২৫০টি নৌকা চলে। এক গোনে মাছ-কাঁকড়া ধরতে জহির নৌকাপ্রতি বন কর্মকর্তাদের ১৩ হাজার করে টাকা দেন। সুন্দরবনের নিষিদ্ধ নীলকমল, পাটকোস্টা, ভোমরখালী—সবখানেই আছে তাঁদের নৌকা। এর মধ্যে ভোমরখালী এলাকা দিয়ে আমারই ৮-১০টি নৌকায় মাছ ধরা চলে। আমরা নৌকাপ্রতি বন কর্মকর্তাদের দিই ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কামরুল, মোজাফফর, জামাল মোড়ল, টুটুল, মোস্তাফিজসহ কয়েকজন আছেন।’
আবু মুছা আরও বলেন, ‘কয়রার মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকাপয়সার মালিক রিয়াছাদ আলী। ফরেস্টের (বনের) লোকজনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো। তার মাধ্যম ছাড়া নিষিদ্ধ এলাকায় নৌকা ঢোকানো যায় না।’
নামগুলো তুলে ধরলে একজন দায়িত্বশীল বন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব ব্যবসায়ীর নাম বললেন, এঁদের সবাইকে আমরা চিনি। তবে এঁদের সুন্দরবনের মধ্যে হাতেনাতে ধরা কঠিন। এ ছাড়া আমাদের জনবলের সংকটসহ অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’
আড়তে বিষের গন্ধ
জুন, জুলাই ও আগস্ট—এই তিন মাস সুন্দরবনে বন্য প্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম। এ সময় বনের নদী-খালে মাছ শিকার ও বনের ভেতর পর্যটক প্রবেশে বন বিভাগের নিষেধাজ্ঞা চলে। তবে এবার বন্ধ মৌসুমে সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা ও হরিণ শিকারের মতো অপরাধ অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি হয়েছে, এমন আলোচনা শোনা যায় সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে।
এমন কথার সূত্র ধরে অনুসন্ধান শুরু হয় গত বছরের ১২ জুলাই থেকে। তখন সুন্দরবনে জেলেদের প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সেই দিনই কয়রার গড়িয়াবাড়ি গ্রামে গিয়ে শোনা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা ভবচন্দ্র দাশকে বনের মধ্যে বাঘে নিয়ে গেছে। ২০ জুলাই ভবচন্দ্রের ভাইপো তাপস দাশ জানান, কাকার সঙ্গে আরও ১১ জন গহিন বনের ভোমরখালী এলাকায় কাঁকড়া শিকার করছেন।
ভোমরখালী এলাকাটি বন বিভাগের নলীয়ান ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন। সেখানকার বন কর্মকর্তা তানজিলুর রহমানকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানালে তিনি ওই এলাকায় দ্রুত অভিযান চালাবেন বললেন। এর কিছুক্ষণ পরই অপরিচিত একটি নম্বর থেকে একজন ফোন করে বললেন, ‘আপনি ফরেস্ট কর্মকর্তাকে ভোমরখালীতে অভিযান চালাতে বলেছেন। বিষয়টা ভালো হলো না।’ বুঝতে বাকি রইল না, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেই চলছে অপরাধ।
যেসব ব্যবসায়ীর নাম বললেন, এঁদের সবাইকে আমরা চিনি। তবে এঁদের সুন্দরবনের মধ্যে হাতেনাতে ধরা কঠিন। এ ছাড়া আমাদের জনবলের সংকটসহ অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল বন কর্মকর্তা
বন্ধ মৌসুমে বনে ঢোকার বিষয়ে কয়রার মৌয়াল আকবারুল ইসলাম বলেন, ‘বন বিভাগ না চাইলে সুন্দরবনের একটা খালের পানিও ছোঁয়ার ক্ষমতা নেই জেলেদের। আমি তো এক বন কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েই মধু কেটে এনেছি।’
গত ১৩ জুলাই ভোরে কয়রার দেউলিয়া বাজার মৎস্য আড়তে গিয়ে মৌয়াল আকবারুলের কথার সত্যতা পাওয়া গেল। আড়ত তখনো খোলেনি। তবে আশপাশের ঘেরের মাছ পৌঁছে গেছে, উঠেছে সুন্দরবনের কাঁকড়াও। আধঘণ্টার মধ্যে দেউলিয়া বাজারের মাছের আড়ত ভরে উঠল মাছ আর মানুষে। মণকে মণ চিংড়ি উঠছে সেখানে। উঠছে ভেটকি, জাবা, সিলেট, পায়রা, দাতিনা, ভাঙালসহ অনেক রকমের মাছ। কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হলো চায়ের দোকানে বসে। তাঁরা বললেন, বেশির ভাগ মাছ ধরা হয়েছে সুন্দরবনের অভয়াশ্রমে অবৈধ জাল আর বিষ দিয়ে।
আড়তের সামনে দেখা যায় কয়েকটি ট্রাক দাঁড়ানো। চালকেরা জানালেন, তাঁরা প্রতিদিন আড়ত থেকে সুন্দরবনের মাছ নিয়ে ঢাকায় যান। কাঁকড়ার আড়তেও দেখা গেল ব্যস্ততা। বস্তায় বস্তায় কাঁকড়া এসেছে সুন্দরবন থেকে। সেগুলো পরিমাপ আর দড়ি দিয়ে বাঁধায় ব্যস্ত লোকজন। অথচ তখন সুন্দরবনে ঢোকা নিষিদ্ধের মৌসুম চলছিল।
বন বিভাগ না চাইলে সুন্দরবনের একটা খালের পানিও ছোঁয়ার ক্ষমতা নেই জেলেদের। আমি তো এক বন কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েই মধু কেটে এনেছি।কয়রার মৌয়াল আকবারুল ইসলাম
মহেশ্বরীপুর এলাকার জেলে মোবারক হোসেন বললেন, ‘তিন মাস সরকারি ঘোষণায় সুন্দরবনে বন্ধ মৌসুম হলেও বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবৈধ চুক্তির মাধ্যমে চলেছে বিষ দিয়ে মাছ ধরার কারবার। ছোট হাতজালে একদিন মাছ ধরতে ৮০০ টাকা, হরিণ শিকারে ৫ হাজার টাকা, ভেসালি জালে বিষ দিয়ে মাছ ধরতে ৩ হাজার টাকা, কাঁকড়া শিকারে টানা চার দিন তিন হাজার টাকা করে নিয়েছেন বনরক্ষীরা।’
ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে ৯টা। দেউলিয়া বাজার মৎস্য আড়তের সামনে থেকে একটি চিংড়িবোঝাই ভ্যান বের হলো। কোথায় যাচ্ছে দেখতে সতর্কতার সঙ্গে ভ্যানগাড়িটির পিছু নেন এই প্রতিবেদক। প্রায় চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামের সড়কের পাশে থামে ভ্যানটি। সেখান থেকে কয়েকজন মিলে চিংড়িগুলো নিয়ে যান মূল সড়ক থেকে কিছুটা দূরে বিলের মধ্যে একটি দোচালা লম্বা ঘরে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে মিশে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটির মধ্যে বাঁশের চটা দিয়ে বানানো মাচার ওপর সাজিয়ে মেলে রাখা হয়েছে কয়েক মণ চিংড়ি। সেগুলো থেকে সেই বিষের উৎকট গন্ধ বের হচ্ছে। পাশে স্তূপ করে রাখা তৈরি হয়ে যাওয়া লালচে রঙের শুঁটকি। মাচার নিচে গাছের টুকরো থেকে ধোঁয়া উড়ছে।
‘এই কারখানার মালিক কে’ প্রশ্ন করলে এক বৃদ্ধা এগিয়ে এলেন। জানা গেল, তাঁর নাম সুফিয়া বেগম। তিনি এখানকার শ্রমিক। মহারাজপুর এলাকার মুকুল গাজীর জায়গা এটি। তাঁকে মাসে তিন হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। কয়রার মহেশ্বরীপুর এলাকার জালাল শেখ কারখানাটি চালান। এখানে বিষ দিয়ে ধরা চিংড়ি সরবরাহ করেন মহারাজপুর এলাকার নূর বক্স গাজী। তিন বছর ধরে এই শুঁটকি তৈরির কারখানা চলছে। আজ (১৩ জুলাই) ২৪৫ কেজি চিংড়ি আনা হয়েছে। পাশে স্তূপ করে রাখাগুলো আগের দিনের।
সুফিয়া আরও জানান, প্রতি কেজি শুঁটকি ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এগুলো নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। গত দুই দিনে ছয় মণের মতো শুঁটকি তৈরি হয়েছে এখানে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে মিশে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটির মধ্যে বাঁশের চটা দিয়ে বানানো মাচার ওপর সাজিয়ে মেলে রাখা হয়েছে কয়েক মণ চিংড়ি। সেগুলো থেকে সেই বিষের উৎকট গন্ধ বের হচ্ছে। পাশে স্তূপ করে রাখা তৈরি হয়ে যাওয়া লালচে রঙের শুঁটকি। মাচার নিচে গাছের টুকরো থেকে ধোঁয়া উড়ছে।
আটকের গুমর ফাঁস
কয়রার পার্শ্ববর্তী সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তাকে অপরাধ দমনে নিষ্ক্রিয়তা ও অপরাধীদের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল মণ্ডল বলেন, ‘কয়রার প্যানেল চেয়ারম্যান লুৎফর, স্থানীয় মহাজন আমিরুল, জামালসহ আরও কয়েকজন অন্তত তিনবার এসেছেন আমার কাছে, বন্ধ মৌসুমে তাঁদের জেলেনৌকাগুলো বনের মধ্যে ঢুকতে দেওয়ার জন্য। তাঁরা আমাকে অনৈতিক প্রস্তাবও দিয়েছেন। আমি রাজি হইনি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়।’
বনজীবী জেলেরা জানান, বন কর্মকর্তারা সরাসরি তাঁদের কাছ থেকে টাকা নেন না। তাঁরা কোম্পানি মহাজনের কাছ থেকে টাকা নেন। জেলেরা আটক হলে কিংবা জরিমানা খেলে ওই সব কোম্পানি মহাজনেরাই জেলেদের হয়ে জরিমানার টাকা দিয়ে থাকেন। পরে সেই টাকা আবার জেলেদের আয় থেকে কেটে নেওয়া হয়।
সম্প্রতি দুটি নৌকা নিয়ে ভোমরখালী এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে আটক হন কয়রার ছয়জন জেলে। আটক এক জেলের চাচা জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগে বন বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করা ওদের দুটি নৌকার ১০ হাজার টাকা বকেয়া ছিল। ওই টাকা না দেওয়ায় এবার কৌশলে জেলেদের ডেকে নিয়ে আটক করে মামলা দিয়েছে।’
আটক আরেক জেলে মিঠুন সরদারের আত্মীয় মোস্তফা হোসেন বলেন, ‘আটক জেলেরা আমাদের জানিয়েছে, তাদের দুই নৌকায় দুটি বড় মাছ রাখার পাত্রে প্রায় ২০০ কেজির মতো সাদা মাছ আর ৬০ থেকে ৭০ কেজির মতো চাকা চিংড়ি ছিল। বনরক্ষীরা সব মাছ নিয়ে গেছেন। দুই দিন আটকে রাখার পর ওরা টাকা দিতে না পারায় বিষের বোতল ধরিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে।’
কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামের বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বনরক্ষীদের সঙ্গে সমঝোতা করে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ অভয়ারণ্যের খালগুলো ইজারা নিই আমরা। তবে বিপত্তি বাধে যখন বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়, তখন।’
জানতে চাইলে ভোমরখালী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাকিম বলেন, ‘বিষ দিয়ে মাছ ধরতে দিই না বলেই জেলেরা বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যে আদেশ দেন, আমরা তা পালন করি মাত্র।’
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনেক কিছুই পরিবর্তন হয় সুন্দরবনে। খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান হয়ে যান সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বনকেন্দ্রিক অপরাধের সঙ্গে বনরক্ষীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে অনেকেই এসব বানোয়াট অভিযোগ করে।’
আবার বনদস্যু
গত ৫ আগস্টের পর অনেক কিছু পরিবর্তনের মধ্যে মারাত্মক যে পরিবর্তন সুন্দরবনে ঘটেছে, সেটি হলো বনদস্যুদের উৎপাত। বনজীবীদের অভিযোগ, দস্যুদের পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন কিছু অসাধু মাছ ও কাঁকড়া ব্যবসায়ী। তাঁরা সুন্দরবনের প্রবেশনিষিদ্ধ এলাকার খাল নিয়ন্ত্রণে রেখে বিষ দিয়ে মাছ ধরতে ডাকাতদের বনে নামাচ্ছেন। ডাকাতেরা সাধারণ জেলেদের জিম্মি করলেও ব্যবসায়ী মহাজনদের অধীন জেলেদের কিছুই বলে না।
জেলেরা জানান, ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণকারী অনেক বাহিনী আবার সুন্দরবনে দস্যুতায় ফিরেছে। বিশেষ করে পশ্চিম সুন্দরবনে মজনু বাহিনী, শরীফ বাহিনী, দয়াল বাহিনী, রবিউল বাহিনী, আবদুল্লাহ বাহিনী, মঞ্জুর বাহিনী, মাসুম বিল্লাহ বাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। এসব ডাকাত দলের সঙ্গে বিষ দিয়ে মাছ শিকারি চক্রের সখ্য আছে।
বনজীবীদের অভিযোগ, দস্যুদের পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন কিছু অসাধু মাছ ও কাঁকড়া ব্যবসায়ী। তাঁরা সুন্দরবনের প্রবেশনিষিদ্ধ এলাকার খাল নিয়ন্ত্রণে রেখে বিষ দিয়ে মাছ ধরতে ডাকাতদের বনে নামাচ্ছেন। ডাকাতেরা সাধারণ জেলেদের জিম্মি করলেও ব্যবসায়ী মহাজনদের অধীন জেলেদের কিছুই বলে না।
কয়রার গড়িয়াবাড়ি এলাকার কয়েকজন বনজীবী জেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুলনার দাকোপ আর আমাদের কয়রা উপজেলার কয়েকজন কোম্পানি মহাজন নিষিদ্ধ এলাকায় জেলেদের মাছ ও কাঁকড়া ধরতে পাঠান। জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই এলাকার মহাজনদের বিরোধ রয়েছে। দাকোপের মহাজনদের ঘনিষ্ঠ ডাকাত দল হচ্ছে মামা-ভাগনে বাহিনী আর কয়রার মহাজনদের ঘনিষ্ঠ রবিউল বাহিনী।’
গত এক মাসের মধ্যে বনদস্যুর কবল থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন কয়রার বেশ কয়েকজন জেলে। তাঁদের মধ্যে ছলেমান মোল্লা, নজরুল গাজী, সুশান্ত রপ্তান, ইমামুদ্দীনসহ অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জিম্মিদশা থেকে মুক্তির জন্য তাঁদের সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। প্রতিটি দস্যু বাহিনীতে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। তাদের সবাই আগ্নেয়াস্ত্রধারী। প্রতিদিন তারা খাবারের চাহিদা মেটাতে হরিণ শিকার করে।
আমরা পুরোনো বনদস্যুদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। দস্যুমুক্ত সুন্দরবনে কেউ নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইলে কঠোর হাতে দমন করা হবে।কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল হক
সুন্দরবনসংলগ্ন ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের জেলে রজব আলী ৬ জানুয়ারি বনদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ফিরে এসেছেন এলাকায়। আলাপকালে তিনি জানান, অপহরণ করে টানা দুই দিন দস্যুদের সঙ্গেই তাঁকে রাখা হয়। এরপর তাঁর ছোট ভাই রিয়াজুল ইসলামকে রেখে তাঁকে ছেড়ে দেয় ডাকাতেরা।
রজব আলী আরও বলেন, ‘ডাকাতেরা মহাজনদের নিয়ন্ত্রিত জেলেদের দিয়ে বিষ ছিটিয়ে মাছ ধরার কাজ দেখাশোনা করে। বনের মধ্যে যেখানে নেটওয়ার্ক পায় সেখানে গিয়ে মোবাইল ফোনে মহাজনদের সঙ্গে কথা বলে ডাকাতেরা।’
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাতক্ষীরা কারাগার থেকে পালানো দাগি আসামি এবং ছয় বছর আগে আত্মসমর্পণ করা দস্যুরা ফের দস্যুতায় যোগ দিয়েছে বলে শুনছি। আমরা পুরোনো বনদস্যুদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। দস্যুমুক্ত সুন্দরবনে কেউ নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইলে কঠোর হাতে দমন করা হবে।’