ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে সাভারে ট্যানারিশ্রমিকদের কর্মবিরতি, বিক্ষোভ
ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকেরা। সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় চামড়াশিল্প নগরের বিভিন্ন ট্যানারির শ্রমিকেরা এ কর্মসূচি পালন করেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ‘ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর ব্যানারে বিভিন্ন ট্যানারির শতাধিক শ্রমিক সাভারের চামড়াশিল্প নগরের প্রধান সড়কে অবস্থান নেন। পরে কর্মবিরতিসহ দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকেরা জানান, বিভিন্ন খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর ইতিমধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি এখনো বাস্তবায়ন করেনি মালিকপক্ষ। এটি বাস্তবায়নের দাবিতে তাঁরা এসব কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিক মো. মামুন বলেন, নভেম্বরের ২১ তারিখে বেতন বাড়ানো হয়েছে। তাঁরা চান না, ট্যানারি মালিক ও শ্রমিকেরা মুখোমুখি হোক। শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ে তাঁরা আন্দোলন করছেন এবং করবেন। পাঁচটি গ্রেডে যেভাবে বেতন ঘোষণা করা আছে, তাঁরা সেভাবে বেতন চান। মালিকেরা কোনো সমাধান না দিয়ে বেতন কম দেওয়ার চেষ্টা করছেন। দাবি পূরণ না হলে তাঁরা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
আন্দোলনকারী নারী শ্রমিক শান্তি খাতুন বলেন, ‘আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি। কিন্তু আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছি। আমরা আমাদের দাবি আদায় করেই ছাড়ব।’
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, মজুরি–সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে বিটিএ, বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) এবং ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা চলছে। গত রোববার বিএফএলএলএফইএর উপদেষ্টা অসুস্থ থাকায় সবার সম্মতিতে পরবর্তী একটি তারিখ নির্ধারণ করে আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যেই কোনো নোটিশ না দিয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন কর্মসূচি পালন করল।
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। এটি বাস্তবায়নের দাবিতে ২২ তারিখ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তখন শুধু টিফিনের সময় ট্যানারির ফটকে শ্রমিকেরা অবস্থান নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষকে ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়নের অনুরোধ করেন।
আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটি এখন বাস্তবায়ন করতে হবে। এখন কোনটি মানা হবে, কোনটি মানা হবে না এমন আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। মালিকপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় তাঁরা আজ কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন। এরপরও মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করলে ওভারটাইম না করার যে সিদ্ধান্ত আছে, সেটি কার্যকর করা হবে।
গত বছরের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ট্যানারি শিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম মজুরি-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ট্যানারি শিল্পের নতুন মজুরি কাঠামোতে সর্বোচ্চ বা প্রথম গ্রেডে আছেন স্কিন সিলেক্টর বা হ্যান্ড মেজারার, বৈদ্যুতিক ও মেশিন মেরামত মিস্ত্রি, হ্যান্ড ফ্রেশারম্যান ও বয়লার অপারেটরসহ ১৩ ধরনের শ্রমিক।
বিভাগীয় শহর ও সাভারে প্রথম গ্রেডের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ধরা হয়েছে হয়েছে ৩৪ হাজার ১৬৮ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ২৫ হাজার ৪০০ টাকা, দ্বিতীয় গ্রেডে ২৮ হাজার ৩৮৮ টাকা; তৃতীয় গ্রেডে ২৪ হাজার ২ টাকা এবং চতুর্থ গ্রেডে ২০ হাজার ৯৯৩ টাকা। এই চার গ্রেডের বাইরে অদক্ষ সাধারণ ও অন্য শ্রমিকদের পঞ্চম গ্রেডে বিভাগীয় শহর ও সাভারে ১৮ হাজার ১ এবং অন্যান্য এলাকায় ১৭ হাজার ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।