‘আমার মাইয়ার মাটির ব্যাংকটা যদি ফেরত দিত’
দুই বছর বয়সী শিশুকে কোলে নিয়ে রাস্তার মোড়ে এক মা হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছেন। কাঁদতে কাঁদতে এর কাছে, ওর কাছে বলে বেড়াচ্ছেন তাঁর একটি ব্যাগ হারানো গেছে। মায়ের কান্না দেখে কোলের শিশুটিও কাঁদছে। আজ শুক্রবার ইফতারের কয়েক মিনিট আগে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়কের বাইপাস মোড়ে এই দৃশ্য দেখা যায়।
ওই নারীর নাম মোছা. ময়না। এ সময় সেখানে হন্তদন্ত হয়ে উপস্থিত হন ওই নারীর স্বামী মো. সোহাগ মিয়া। তিনি এই প্রতিবেদককে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ভাই কোনো ব্যাগ পাওয়া গেছে? ওই ব্যাগের ভেতর আমার মেয়ের জন্য জমানো টাকাভর্তি মাটির ব্যাংক ছিল।’ না–সূচক উত্তর শুনে সোহাগ–ময়না দম্পতির মুখ মলিন হয়ে যায়।
ওই দম্পতির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, তাঁরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে কাপাসিয়ার বাইপাস মোড়ে তাঁদের ব্যাগটি হারিয়ে ফেলেছেন। মনের ভুলে ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশায় তাঁদের ব্যাগ রেখে অন্য একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে হঠাৎ ব্যাগের কথা মনে হলে পেছন ফিরে দেখেন অটোরিকশাটি সেখানে নেই।
সোহাগ-ময়না দম্পতি থাকেন গাজীপুরের শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায়। সোহাগের বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার দশগাঁও গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে। শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় ফখরুদ্দিন টেক্সটাইল কারখানায় চাকরি করেন সোহাগ। শুক্রবার ঈদের ছুটিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলায় রওনা করেছিলেন।
সোহাগ মিয়া বলেন, সিনথিয়া আক্তার তাঁর একমাত্র সন্তান। তার জন্য এক বছর ধরে মাটির ব্যাংকে টাকা-পয়সা জমাচ্ছিলেন তাঁরা। এই ঈদের ছুটিতে পোশাক–আশাকের সঙ্গে মাটির ব্যাংকটিও শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। ব্যাগের ভেতর মাটির ব্যাংক ছাড়াও মেয়ের জন্য কেনা চারটি ঈদের পোশাক, স্ত্রীর পোশাক, নিজের পোশাকসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল। এসব বলতে বলতে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে সোহাগের। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে ভীষণ মন খারাপ করছে। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। মেয়ের জমানো টাকার জন্য সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ হচ্ছে। এই ঈদ আর আমাদের কপালে নাই।’
কথা বলার সময় অঝোরে কাঁদছিলেন মোছা. ময়না। তিনি বলছিলেন, ‘আমার ভুলের কারণে মাইয়ার জমানো টাকাসহ সবকিছু হারিয়ে গেল। কেউ পাইলে আমার মাইয়ার মাটির ব্যাংকটা যদি ফেরত দিত, আমার মাইয়া অনেক খুশি হইত।’