মাদারীপুরে নিহত শ্রমিক দল নেতার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ, শ্রমিক দলের সব কমিটি বিলুপ্ত

শাকিল মুনশিছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরে নিহত সদর উপজেলার শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুনশির লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ সময় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমানের প্রত্যাহারের দাবিও করেছেন তাঁরা।

আজ সোমবার বিকেলে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিহত শাকিলের ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে থানার সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখান থেকে স্বজন ও এলাকাবাসী লাশ নিয়ে শাকিলের গ্রামের বাড়ি যান। এরপর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

নিহত শাকিল মুনশি (৩৩) মাদারীপুর সদর উপজেলার নতুন মাদারীপুর এলাকার মোফাজ্জেল মুনশির ছেলে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের নতুন মাদারীপুর এলাকায় শ্রমিক দলের একটি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুনশিকে কুপিয়ে হত্যা করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত লিটন হাওলাদার শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকার মফেজ হাওলাদারের ছেলে ও আরেক অভিযুক্ত লিটনের ভাতিজা আল আমিন হাওলাদার একই এলাকার আলমগীর হাওলাদারের ছেলে।

নিহত শাকিল মুনশির মেজ ভাই রাজু হাওলাদার বলেন, ‘আমার ভাইকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের পুলিশ ধরছে না। তাঁদের পালানোর কাজে থানার ওসি সহযোগিতা করছেন। আমরা ওসির প্রত্যাহার চাই। একই সঙ্গে আমার ভাইকে যাঁরা খুন করেছেন, তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’

মাদারীপুর সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুনশিকে কুপিয়ে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেন স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা। রোববার রাতে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে শাকিল হত্যার ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সদর মডেল থানায় কোনো মামলা হয়নি। জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবার থানায় এখনো মামলা করতে আসেনি। তাঁরা অভিযোগ দিলেই মামলা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে। বাকিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। থানা-পুলিশ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে। পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে নিহত ব্যক্তির অভিযোগ সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সারা রাত অভিযান চালানো হয়েছে। থানার ওসির অপসারণ চাওয়া অযৌক্তিক। পুলিশ তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাকমতো পালন করেছে।

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা নতুন মাদারীপুর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। শাকিলের অনুসারীরা সোমবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত লিটন হাওলাদারসহ চারজনের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এ ছাড়া পাঁচটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শ্রমিক দলের সব কমিটি বিলুপ্ত

মাদারীপুর সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জেলার শ্রমিক দলের সবগুলো কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলামের স্বাক্ষর করা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহান্দার আলী জাহান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদারীপুর শ্রমিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও স্বৈরাচারের অনুপ্রবেশ ঘটায় দলটির ত্যাগী নেতা শাকিল মুনশিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ কারণে জেলার শ্রমিক দলের সব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। শাকিল হত্যার সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত। হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুর পৌর শ্রমিক দলে লিটন হাওলাদারকে সভাপতি করে একটি কমিটি ঘোষণা করে জেলা কমিটি। এ নিয়ে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। জেলা কমিটির অনেক নেতা-কর্মী লিটনকে আওয়ামীপন্থী অভিযোগ করে পৌর শ্রমিক দলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ও কমিটি বাতিলের দাবি জানান।

গতকাল দুপুরে শহরের একটি সড়কে অবস্থান নিয়ে পৌর শ্রমিক দলের কমিটি গঠন করায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। পৌর শ্রমিক দলের এই কমিটি নিয়ে লিটন হাওলাদারের সঙ্গে সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুনশির মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়। পৌর কমিটি বাতিল করতে গতকাল রাতে শাকিল তাঁর কয়েকজন অনুসারী নিয়ে শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় একটি সভায় যাচ্ছিলেন। নতুন মাদারীপুর এলাকায় এলে শাকিলের ওপর হামলা চালান লিটন হাওলাদারের ভাতিজা আল আমিনসহ ১৫-২০ জন। এ সময় শাকিলকে দেশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। শাকিলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে কুপিয়ে আহত করা হয় আরও দুজনকে।

এদিকে শাকিলকে হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে দেশি অস্ত্র নিয়ে লিটনের অনুসারীদের সঙ্গে শাকিলের অনুসারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।