কুমিল্লায় চোর সন্দেহে শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা
কুমিল্লা নগরে মুঠোফোন চোর সন্দেহে এক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাতে নগরের ঢুলিপাড়া চৌমুহনী এলাকার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) ১ নম্বর গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকের নাম সাদ্দাম হোসেন (২৭)। তিনি কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার ঘোড়াশাল রামপুর এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে। তিনি আবির সিকিউরিটি সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করতেন।
স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাজ শেষ করে গত সোমবার রাতে সাড়ে আটটার দিকে ইপিজেডের ১ নম্বর গেটের পাশ দিয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন সাদ্দাম হোসেন। পাশেই ইপিজেডের গেট-সংলগ্ন ওয়ালটন শোরুম থেকে মুঠোফোন চুরির অভিযোগে সাদ্দামকে আটক করে এলাকার ১৫-১৬ যুবক পিটুনি দেন। শোরুমের মালিক রুবেল তাঁকে বাঁচাতে ভেতরে আশ্রয় দেন। এরপর কিছুক্ষণ সাদ্দামের সঙ্গে কয়েকজন কথা বলেন। কথা বলার ভিডিও মুঠোফোনে কয়েকজন রেকর্ডও করেন, যা ফেসবুকে প্রকাশ পায়। পরে দোকান থেকে সাদ্দামকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে বের করে পিটুনি দেওয়া হয়। আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তিনি মারা যান।
সাদ্দামের স্ত্রী শিউলী বলেন, ‘আমার স্বামী কাজে গেছে, এটাই জানি। রাতে কয়েকজন লোক আমার বাড়িতে গিয়ে আমাকে বলে, “তোমার স্বামী থানায় একটা সমস্যায় আটক আছে। এখন তার ভোটার আইডি কার্ড লাগবে।” আমি ভোটার আইডি কার্ড তাদের দিই, তারা পরে আমার মোবাইলটিও নিয়ে যায়। আমি খোঁজ নিয়ে দেখি, থানায় আমার স্বামী নেই। সকালে জানতে পারি, আমার স্বামীর লাশ হাসপাতালে। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।’
কেউ কেউ বলছেন, পিটুনিতে সাদ্দাম ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। পরে মঙ্গলবার সকালে তাঁর লাশ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
আবির সিকিউরিটি সার্ভিসের মালিক আরিফ বলেন, সাদ্দাম তাঁর প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর ধরে কাজ করে আসছিলেন। এ সময়ের মধ্যে তাঁর খারাপ কোনো কিছু চোখে পড়েনি। কেন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সঠিক তদন্ত করলে সব রহস্য উদ্ঘাটন হবে।
সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি সোমবার রাতের হলেও পুলিশ জানতে পারে মঙ্গলবার সকালে। লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।