মাছ চাষ করে খালের বারোটা

খুলনার কয়রা উপজেলার খোড়লকাঠী খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার সুন্দরবন–সংলগ্ন কয়রা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ৯৯টি ছোট-বড় সরকারি খাল। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক খালে অবৈধভাবে মাটির বাঁধ নির্মাণ ও বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও গ্রীষ্ম মৌসুমে সেচ দিতে না পারায় কয়েক হাজার হেক্টরে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ শাকবাড়িয়া খালের পশ্চিমাংশ কপোতাক্ষ নদের হোগলা ও পূর্বাংশ শাকবাড়িয়া নদীর সুতিরা বাজার গিয়ে শেষ হয়েছে। মাছ চাষের জন্য বাঁধ ও বাঁশের বেড়া দিয়ে খালটি ১০ খণ্ডে ভাগ করা হয়েছে। খালটির বিভিন্ন স্থানে প্রশস্ততা কমে এখন প্রায় নালা হয়ে গেছে। অথচ একসময় এই খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা চলাচল করত। খালটির কিনারে মাটি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা। নানা ধরনের বর্জ্য ফেলায় দূষিত হচ্ছে পানি। বাঁধ ও বাঁশের বেড়া নির্মাণ করায় অন্তাবুনিয়া, শ্রীরামপুর, কালনা, মহারাজপুর, মঠবাড়ী বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। খালের অন্তাবুনিয়া এলাকা বালু দিয়ে ভরাট করে মাঠ তৈরি করায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, তিন কিলোমিটার দীর্ঘ আমতলার খালের দুই স্থানে বাঁধ দিয়ে ও আটটি স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করে পানির প্রবাহে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলার কয়রা সদর ইউনিয়নের চার কিলোমিটার দীর্ঘ কাশির খালটি ২ নম্বর কয়রা গ্রাম লাগোয়া কপোতাক্ষ নদ থেকে শুরু করে গুড়িয়াবাড়ী বাজার–সংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদীতে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। খালের ৯টি স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। খালটির জরাজীর্ণ স্লুইসগেট দিয়ে প্রবেশ করছে লোনাপানি। খালটির দুই পাশের একাধিক জায়গায় ইট-বালু আর মাটি দিয়ে ভরাট করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দোকানপাট।

মহারাজপুর ইউনিয়নের বেড়ের খালের চারটি স্থানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ইউনিয়নটির মাদারবাড়ি, লক্ষ্মীখোলা, দক্ষিণ দেয়াড়া বিলের অধিকাংশ জমিতে এবার আমন চাষ হচ্ছে না। খালটির মাদারবাড়ির অংশে মিষ্টি পানি থাকলেও দেয়াড়ার অংশে ইজারা নিয়ে লোনাপানিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কয়রা উপজেলার অনূর্ধ্ব ২০ একরের ৯৯টি ছোট-বড় সরকারি খালের মধ্যে ৬৩টি খাল ৪১ লাখ ৫৭ হাজার ১৩০ টাকায় ইজারা দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া মামলা চলমান থাকায় ১২টি খালে ইজারা বন্ধ ও তিনটি খালের ইজারা স্থগিত রয়েছে। ১৭টি খাল থেকে খাস আদায় করা হয়। চারটি খাল সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে।

কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস বলেন, বিলে ফসল ও মাছের সমন্বিত চাষের জন্য খালে লোনাপানি যাতে ঢুকতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুর রহমান বলেন, খালে কোনো অবস্থাতেই বাঁধ কিংবা বেড়া দিয়ে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সুযোগ নেই। শুষ্ক মৌসুমে কৃষকদের চাষাবাদের জন্য অবাধে মিষ্টি পানি দিতে হবে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।