জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের মৃত্যু
বাংলাদেশ জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বারকোনা গ্রামে নিজ বাসভবনে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
রবীন্দ্রনাথ সরেন দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগসহ নানা অসুখে ভুগছিলেন। ১ জানুয়ারি তাঁকে দিনাজপুর জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আইসিইউয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে গত মঙ্গলবার তাঁকে বাড়িতে আনা হয়। আজ শনিবার তাঁর শেষকৃত্য।
রবীন্দ্রনাথ সরেন কৃষিকাজের পাশাপাশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন–সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ছিলেন তিনি। তিনি ১৯৯০ সালে নওগাঁর আঘোর নিয়ামতপুরে প্রথম সিধু-কানু চাঁদ ভৈরব স্মৃতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংগ্রামগাথা তুলে ধরেন। ১৯৯৬ সালে নওগাঁর মহাদেবপুরের নাটশালে তিনিই প্রথম কারাম উৎসব শুরু করেন, যা পরবর্তী সময়ে সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী–অধ্যুষিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৩ সালে তিনি জাতীয় আদিবাসী পরিষদ গঠন করেন। তিনি দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার তেভাগা চত্বরে সিধু–কানুর ম্যুরাল নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০০১ সালে আলফ্রেড সরেন হত্যার প্রতিবাদে তিনি আন্দোলন করেছিলেন। ফুলবাড়ি কয়লা খনিবিরোধী আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রাখেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী–বিষয়ক গবেষক দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদুল হক বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে গেলেন রবীন্দ্রনাথ সরেণ। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী–সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে গবেষণা কিংবা তথ্য–উপাত্তের জন্য দেশের অনেক লেখক, গবেষক, সাহিত্যিক ও নাট্যনির্মাতা তাঁর স্মরণাপন্ন হতেন। মানুষের স্মৃতিতে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবেন তিনি।