হিরো আলমকে উপহার দেওয়া গাড়ির ফিটনেস নেই, বিআরটিএর পাওনা ৫ লাখ টাকা
হবিগঞ্জের শিক্ষকের কাছ থেকে উপহার পাওয়া গাড়িটি নিয়ে একরকম বিপদেই পড়েছেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। টয়োটা নোয়াহ ১৯৯৮ মডেলের উপহার পাওয়া গাড়িটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ১০ বছর আগে। ওই গাড়ির ট্যাক্সও দেওয়া হয়েছে সর্বশেষ ২০১৩ সালে। বর্তমানে ওই গাড়ির বিপরীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পাওনা প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।
উপহার দানকারী শিক্ষক এম মখলিছুর রহমান এত দিন গাড়িটি অবৈধভাবেই চালিয়ে আসছিলেন। এ বিষয়ে হিরো আলম আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, গাড়ি গ্রহণের আগে গাড়ির ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া এবং বিআরটিএর বকেয়া পাওনার বিষয়ে তিনি জানতেন না। পরে গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেন।
হিরো আলমকে গাড়ি উপহার দেওয়া এম মখলিছুর রহমান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামের হাজি আবদুল জব্বার জিএল একাডেমি অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। উপনির্বাচনের এক দিন আগে গত ৩১ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে তিনি হিরো আলমকে নিজের ব্যবহৃত নোয়াহ মাইক্রোবাসটি উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন।
হিরো আলম উপহারের গাড়ি নিতে গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জে আসেন। এ গাড়ি হস্তান্তর উপলক্ষে ওই শিক্ষকের বাড়ির সামনে বানানো হয় একটি মঞ্চ। নানা আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে হিরো আলমকে এ গাড়ি হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন সকাল থেকে চুনারুঘাটের নরপতি গ্রামে মানুষের ঢল নামে। চুনারুঘাট উপজেলা ছাড়াও হবিগঞ্জ সদর, বাহুবল, মাধবপুর উপজেলা থেকেও উৎসুক মানুষ হিরো আলমকে একনজর দেখতে আসেন।
মখলিছুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে গাড়িটি তিনি কিনেছিলেন। এই গাড়ির সর্বশেষ ট্যাক্স দেওয়া হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ। একই বছরের ১৫ জুলাই ফিটনেস সনদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় এই গাড়ির। তিনি মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেসেই গাড়িটি ক্রয় করেন।
গাড়ির কাগজপত্রসংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে জানতে চাইলে মখলিছুর বলেন, এই গাড়ি নিয়ে চলাচলে তাঁর কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। মাঝেমধ্যে পুলিশ আটক করলেও যখন জানতে পারত যে গাড়িটি তিনি স্কুলে যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করেন, তখন পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিতেন। মখলিছুরের দাবি, গাড়ি উপহার হিসেবে হস্তান্তরের আগেই তিনি বিষয়টি হিরো আলমকে জানিয়েছেন।
হিরো আলম বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে দেখব, কত টাকা পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। আমি যেহেতু এই গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করব, সুতরাং এটা জনসেবায় ব্যবহৃত হবে। আশা করি, সরকার বা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বকেয়ার বিষয়ে ছাড় দিবে।’
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ওই গাড়ির ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সনদ নিয়মিত নবায়ন না করায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো বকেয়া জমে থাকতে পারে। তবে পুরোপুরি হিসাব পেতে হলে ব্যাংক থেকে ওই হিসাব নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, হিরো আলম বগুড়া-৬ আসনে জামানত হারালেও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন। ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি। এরপর হিরো আলম অভিযোগ করেন, ভোটের ফলাফলে কারচুপি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে হারলেও রাজনীতির মাঠেও তাঁকে নিয়ে চলছে আলোচনা।
এদিকে উপনির্বাচনের এক দিন আগে গত ৩১ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে শিক্ষক মখলিছুর রহমান ঘোষণা দেন, তিনি তাঁর নিজের ব্যবহৃত নোয়াহ মাইক্রোবাসটি হিরো আলমকে উপহার দেবেন। ভিডিওতে মখলিছুর রহমান বলেন, ‘হিরো আলম একসময় জিরো ছিলেন। জিরো থেকে তিনি হিরো হয়েছেন। হিরো আলম এখন সোনার টুকরা। দুই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়ার মানুষ জানের চাইতে তাঁকে বেশি ভালোবাসেন। তিনি বগুড়ার মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। নির্বাচনের ফল যেটাই আসুক না কেন, সিলেট বিভাগের পক্ষ থেকে গাড়িটি তাঁকে উপহার দিতে চাই।’
প্রথম দিকে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি হিরো আলম, যোগাযোগও করেননি। কয়েক দিন পর আবার আক্ষেপ প্রকাশ করে ভিডিও দেন এম মখলিছুর রহমান নামের ওই শিক্ষক। এরপর যোগাযোগ করেন হিরো আলম। অবশেষে সেই গাড়ি নিতে হিরো আলম গতকাল হবিগঞ্জে যান।