ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটায় তাঁর চলচ্চিত্র নিয়ে দেয়ালচিত্র মুছে ফেলার নির্দেশ
কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত রাজশাহীর বাড়ির দেয়ালে তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র মেঘে ঢাকা তারা, অযান্ত্রিক, বাড়ি থেকে পালিয়ে-এর পোস্টার রং-তুলির সাহায্যে চিত্রায়িত করা হয়েছিল। ঋত্বিক ঘটকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে এই দেয়ালচিত্র মুছে ফেলতে বলা হয়েছে। রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে অনুষ্ঠানের আয়োজক রাজশাহীর ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি জানিয়েছে।
রাজশাহী নগরের মিয়াপাড়ায় ঋত্বিক ঘটকের এই পৈতৃক বাড়ি। এ বাড়িতেই শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি সময় কাটিয়েছেন ঋত্বিক ঘটক। রাজশাহীর সংস্কৃতিকর্মীদের দাবির মুখে বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগের মধ্যেই গত ৬ আগস্ট বাড়িটি পুরোপুরি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের লোকজন বাড়িটি ভেঙে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা।
ঋত্বিকের পরিবার কলকাতায় চলে যাওয়ার পরে ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সরকার এ বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে ইজারা দিয়েছিল। ঋত্বিকের ভিটার উত্তর অংশে গড়ে তোলা হয় হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের আধুনিক ভবন। আর এই ভবনের দক্ষিণ অংশে ছিল ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত পুরোনো বাড়ি।
রাজশাহীর ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি দীর্ঘদিন ধরেই ঋত্বিকের বাড়িটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিল। সরকারও এতে সাড়া দিয়েছিল; কিন্তু নানাভাবেই এর বিরোধিতা করে আসছিল হোমিওপ্যাথি কলেজ। ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি প্রতিবছর ঋত্বিকের জন্মদিনে এ বাড়ির আঙিনায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যেই গত ৬ ও ৭ আগস্ট বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এবার ঋত্বিক ঘটকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে গত সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ওই ভাঙা বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইটের দুটি স্তূপের মাঝখানের অল্প একটি ফাঁকা স্থানে করা হয় অতিথিদের বসার জায়গা। ইটের দুটি স্তূপে জ্বালানো হয় অসংখ্য মোমবাতি। একটি স্তূপের ওপর রাখা হয় ঋত্বিক ঘটকের ছবি। অন্য আরেকটি স্তূপের ওপর ব্যানারে লেখা ছিল ‘ঋত্বিক ঘটকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী’।
ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটায় রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক কলেজের দক্ষিণ দিকের ভেঙে ফেলা কক্ষগুলোর দেয়ালে ঋত্বিক কুমার ঘটক নির্মিত চলচ্চিত্র মেঘে ঢাকা তারা, অযান্ত্রিক, বাড়ি থেকে পালিয়ে এগুলোর পোস্টার রংতুলির সাহায্যে চিত্রায়িত করা হয়।
ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদ বলেন, শেষ দিনের অনুষ্ঠান চলাকালে হোমিও কলেজের একজন পিয়ন এসে তাঁকে বলেন, ‘অধ্যক্ষ স্যার আপনাকে ফোন দিচ্ছেন, ধরেন।’ তিনি ফোন বের করে দেখেন, তাঁকে চারবার কল করা হয়েছে। তিনি ফোন ব্যাক করলে হোমিও কলেজের অধ্যক্ষ তাঁকে বলেন, ‘মাসুদ ভাই, দক্ষিণের দেয়ালে কীসব এঁকেছেন, সেটা মুছে দিয়ে যাবেন।’
মাহমুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে নিয়ে তারা জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে হোমিওপ্যাথিক কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মাসুদ ভাইকে (মাহমুদ হোসেন) বলেছেন, অনুষ্ঠান শেষে কলেজ যে রকম ছিল, সে রকম করে দিয়ে যাবেন। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি। দেয়ালে আঁকা ছবিগুলো মুছে ফেলা হোক—আপনি এটাই চাইছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমার সভাপতি বলতে পারেন, তিনি কলেজটা কীভাবে রাখবেন।’