দলীয় কর্মসূচিতে না যাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের দুই শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। আজ শনিবার বিকেলে হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। তবে অভিযুক্ত এক ছাত্রলীগ নেতা বলছেন, ‘বেডটা একটু নিচে নামিয়ে দিয়েছি, যাতে পরবর্তী সময়ে সে আমার কাছে আসে।’
অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতারা হলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আলী ও সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম। নাঈম বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং মাজহারুল তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁরা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের অনুসারী বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জোনায়েদ আহমদ ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন। জোনায়েদ ৩৫১ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং জোবায়েদ প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ওই কক্ষে থাকেন।
ভুক্তভোগী ও হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বেলা দুইটার দিকে ৩৫১ নম্বর কক্ষে যান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আলী ও সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম। তাঁরা কক্ষের সবাইকে কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকেন। কিন্তু ৫ জুন জোবায়েদের পরীক্ষা থাকায় তিনি কর্মসূচিতে যেতে অস্বীকৃতি জানান। বিষয়টি শুনেও ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যেতেই হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যান তাঁরা। এর কিছুক্ষণ পর আবার ওই নেতাদের দুজন অনুসারী এসে কক্ষের সবাইকে কর্মসূচিতে যেতে বলেন। অন্যথায় তাঁদের হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আবার ওই কক্ষে যান মাজহারুল ও তাঁর এক অনুসারী। তাঁরা ভুক্তভোগীদের বিছানাপত্র নামিয়ে দেন। এ সময় ভুক্তভোগীদের কেউ ওই কক্ষে ছিলেন না।
ভুক্তভোগী জোনায়েদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে তাঁদের দেখা হলেই তাঁরা আমাকে কর্মসূচিতে যেতে বলেন। কিন্তু আমি তো রাজনৈতিকভাবে হলে উঠি নাই। প্রাধ্যক্ষ স্যারই আমাকে হলে তুলেছেন। আগেও তাঁরা আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। কিন্তু আমি কাউকে কিছু বলি নাই। আজকেও তাঁরা আমাকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকেন। আমি কর্মসূচিতে না যাওয়ায় তাঁরা আমার বিছানাপত্র নামিয়ে দিয়েছেন।’
ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন বলেন, তিনি রাজনৈতিকভাবে হলে উঠলেও এখন ‘নন-পলিটিক্যাল ব্লকে’ বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শয্যা ভাগাভাগি করে থাকেন। ছাত্রলীগের ওই নেতারা তাঁদের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বলেন। আজ যখন নাঈম ও মাজহার তাঁদের ডাকতে আসেন, তখন তিনি তাঁদের পরীক্ষার কথা জানান। কিন্তু তাঁরা কোনো কথা শোনেননি। পরে আরও দুজন এসে তাঁদের কর্মসূচিতে যেতে বলেন। অন্যথায় তাঁদের বিছানা ফেলে দেবেন বলে হুমকি দিয়ে যান। পরে তাঁর বিছানাপত্র নামিয়ে দেওয়া হয়।
তবে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা নাঈম আলী বলেন, ‘আমি ওই রুমে যাইনি। আর মাজহারুল গিয়েছিল কি না, আমি জানি না। আমি তাঁদের ডেকে বিষয়টি সমাধান করব।’
অভিযুক্ত মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তারা ছাত্রলীগের মাধ্যমেই হলে উঠেছে। যারা আমাদের কর্মী তাদের আমরা কর্মসূচিতে ডাকি। স্বাভাবিকভাবেই তারা না এলে আমরা একটু শাসন করি। এর মানে তাদের বের করে দিচ্ছি, বিষয়টি এমন নয়। বেডটা একটু নিচে নামিয়ে দিয়েছি, যাতে পরবর্তী সময়ে সে আমার কাছে আসে। আমি তাদের জোরাজুরি করি নাই। তারা যদি বলত ভাই, প্রোগ্রাম করব না, তাহলে আমি আর ডাকতাম না।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি মাত্র শুনেছেন। খোঁজখবর নিয়ে ছাত্রলীগের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘অভিযুক্ত মাজহারুল আমাদের হলের শিক্ষার্থী না। আমরা আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীরা নিজেদের আসনেই থাকবে।’