‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় নারী উদ্যোক্তা
ঢাকার শপিং মল থেকে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেনকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এক নারী উদ্যোক্তা। এ ঘটনায় আজ বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন তিনি।
জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
পুলিশ সূত্র জানায়, বর্তমানে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার একটি খুনের মামলায় সাজ্জাদ সাত দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
রুমা আক্তার নামের ওই নারী উদ্যোক্তা বাদী হয়ে করা মামলায় সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন, পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান, হাবিব খানসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা হলেন গ্রেপ্তার সাজ্জাদের সহযোগী মো. রায়হান, মো. হেলাল, মো. হাসান, মো. আরমান, মো. ইমন, মো. বোরহান, মো. রাজু ও মো. দিদার। রুমা আক্তারের বিউটি পারলার ও বুটিক হাউস রয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত শনিবার ঢাকায় একটি শপিং মলে কেনাকাটা করতে যান নারী উদ্যোক্তা রুমা আক্তার ও তাঁর স্বামী। সেখানে সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রীকে দেখতে পান। পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত সন্ত্রাসীকে দেখে চিনতে পেরে আশপাশের লোকজনকে জড়ো করে আটক করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সাজ্জাদকে আটক করে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যায়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার পর থেকে তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে বাদীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। এ ছাড়া বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী খান ও হাবিব খান মুঠোফোনে বাদীকে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন গত মঙ্গলবার। তাঁরা বাদীর কাছে এক কোটি টাকা চাঁদাও দাবি করেন। নইলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কারও নাম ধরে হুমকি দিইনি। সেদিন গত শনিবার ঢাকার শপিং মলে আমার স্বামী ও আমাকে মারধর করেছেন রুমা আক্তার। পরে আমি তেজগাঁও থানার ওসিকে ফোন করি।’
এর আগে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর তামান্না শারমিনের আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। এতে তামান্নাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে (স্বামী) নিয়ে আসব। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন মামলার বাদী রুমা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পলাতক সন্ত্রাসীকে দেখে লোকজন জড়ো করে সচেতন নাগরিক হিসেবে ধরিয়ে দিয়েছি। এখন আমি আমার পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’
এর আগে সাজ্জাদকে ধরতে গত ৩০ জানুয়ারি পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। এর আগের দিন ফেসবুক লাইভে এসে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকে পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন সাজ্জাদ হোসেন।
পুলিশ জানায়, সাজ্জাদ হোসেন বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১৭টি মামলা রয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরে আনিস, কায়সার ও আফতাব উদ্দিন নামের তিন বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার মামলার আসামি তিনি।
জানা গেছে, গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসের শুরুতে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। এতে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন।