রাজবাড়ীতে বালু ব্যবসায়ী হত্যার দায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
রাজবাড়ীতে ব্যবসায়ী শাফিন খান ওরফে শাফি (৪০) হত্যা মামলায় দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার বিকেলে রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোসাম্মৎ জাকিয়া পারভিন রায় ঘোষণা করেন। নিহত শাফিন খান কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের বক্কার খানের ছেলে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের সালাম মোল্লার ছেলে আরিফ মোল্লা ওরফে আরিফুজ্জামান আরিফ এবং একই গ্রামের ইব্রাহীম প্রামাণিকের ছেলে রুহুল আমিন প্রামাণিক। রুহুল আমিন খোকসার আমবাড়িয়া ইউপির সদস্য ছিলেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সেনগ্রামের মুরাদ আলী মন্ডলের ছেলে সামাদ মন্ডল, শাজাহান প্রামাণিকের ছেলে ওয়াহেদ আলী প্রামাণিক, পাবনা সদর উপজেলার আকাই কাজীর ছেলে রশিদ কাজী (পলাতক), কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের আবদুস সাত্তার মোল্লার ছেলে রাজীব মোল্লা, একই গ্রামের আবুল হোসেন মোল্লার ছেলে সবুজ মোল্লা ও মোতালেব মোল্লার ছেলে সাগর মোল্লা।
আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ছয়জনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। এ ছাড়া ২০১ ধারায় প্রত্যেককে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরিফুজ্জামান আরিফ ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত রশিদ কাজী অনুপস্থিত ছিলেন। অন্য তিন আসামি খোকসার আমবাড়িয়া গ্রামের সেলিম রানা, একই গ্রামের রতন মোল্লা ও উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামের সুমন ওরফে কবিরুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় আদালত তাঁদের বেকসুর খালাস দেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, শাফিন খান প্রায় ১৮ বছর সৌদি আরব ছিলেন। হত্যার শিকার হওয়ার চার বছর আগে তিনি দেশে ফেরেন। প্রায় তিন বছর বেকার বসে থাকার পর বালুর ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলরা হাবাসপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর বেড়িবাঁধের বিপরীতে চরপাড়া গ্রামের একটি আখখেত থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে পাংশা মডেল থানা পুলিশ। তাঁর শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল। আগের দিন ১৬ ডিসেম্বর তাঁকে পাংশায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের দাওয়াতের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসে দুর্বৃত্তরা।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিহত ব্যক্তির ভাই ফরিদ হাসান খান পাংশা থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-৬) দায়ের করেন। মামলার এজাহারে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে পুলিশ মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে আরও ছয়জনের জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পায়। তদন্ত শেষে পুলিশ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
রায় প্রসঙ্গে রাজবাড়ী আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আবদুর রাজ্জাক (২) প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি আলোচিত হত্যা মামলা ছিল। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজন হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এতে তাঁরা বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে আদালতকে জানান। আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে তিনি খুশি। এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।